দিনের ক্লান্তি কাটাতে ঘুমের বিকল্প নেই। তবে শুধু ঘুমালেই যথেষ্ট নয়, ঘুম হতে হবে নিয়মিত ও স্বাস্থ্যসম্মত। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে অনেকের ঘুমের ধরণ এলোমেলো হয়ে পড়েছে। রাত জেগে কাজ বা মোবাইল ব্যবহার, দিনে ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস কিংবা সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনে কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা—এসব প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
চার ধরনের ঘুমের অভ্যাস
প্রায় ৩ হাজার ৭০০ জন মানুষের ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ঘুমের চারটি ধরন চিহ্নিত করেছেন—
১. ভালো স্লিপারস: নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস।
২. ন্যাপারস: রাতে ভালো ঘুমালেও দিনে নিয়মিত ঝিমুনি দেন বা ঘুমান।
৩. উইকেন্ড ক্যাচ-আপ স্লিপারস: কর্মদিবসে কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে ঘাটতি পূরণ করেন।
৪. ইনসমনিয়া স্লিপারস: যাদের ঘুম আসতে দেরি হয়, সময় কম ঘুম হয় এবং দিনে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি মানুষই ন্যাপারস ও ইনসমনিয়া স্লিপারস ক্যাটাগরিতে পড়েছেন।
ইনসমনিয়া আক্রান্তদের ঝুঁকি
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইনসমনিয়ায় ভোগা ব্যক্তিদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্নতার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। গবেষক দলের প্রধান ডা. সুমি লি বলেন— “যাদের দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের পক্ষে আবার স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দে ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের মান উন্নত করা গেলে তা সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
দিনের বেলার ন্যাপ নিয়েও সতর্কতা
চিকিৎসকদের মতে, যাদের রাতে মোটামুটি ভালো ঘুম হয়, কিন্তু দিনে নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস আছে, তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই দিনের বেলা ঘুমের অভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
শুধু বিশ্রাম নয়, শরীরের পুনর্গঠন
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, ঘুম মানেই কেবল বিশ্রাম নয়; বরং শরীর ও মস্তিষ্কের পুনর্গঠনের অপরিহার্য ধাপ। তাই ঘুমের মান ও ধরন—দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ও সুষম ঘুম ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।