জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যায় মারণাস্ত্র (লেথাল উইপন) ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, সাবেক এনটিএমসি মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত করতেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করত। হত্যার পর অনেকের মরদেহ সিমেন্টের ব্যাগে বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো।
আলমগীরের জবানবন্দি অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে ৪১ জেলার ৪৩৮ স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসময় শুধুই নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনালে আলজাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়। আলজাজিরার তথ্যমতে, শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসকে বলেছিলেন আন্দোলন দমনে ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করা হবে। বিবিসি জানায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ২৪৪৪ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল, এর মধ্যে ৬৯৫টি এসএমজির গুলি।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী টোলপ্লাজায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন শিক্ষার্থী মিরাজ। তার ভাই জানান, এর আগের দিন গণভবনে জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ঢাকার প্রবেশমুখে কঠোর ব্যারিকেড বসিয়ে আন্দোলন দমন করার।
আলমগীর আরও বলেন, জুলাইয়ে হত্যাকাণ্ড বন্ধে আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নেননি; বরং গত ১৫ বছর খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে শুনানি হয়, যা বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদ, মাহামুদুর রহমান ও নাফিসা হোসেন মারওয়াসহ কয়েকজনের পরিবারের সাক্ষাৎকারও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করা হয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর