বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন

অতিথি লেখক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন
বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন

অনেকে বিমানে উঠলেই মাথা ঘোরা, কানে বন্ধ লাগা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এটি সাধারণত “মোশন সিকনেস” বা গতিজনিত অসুস্থতার কারণে হয়। বিশেষ করে যারা প্রথমবার বিমানে ওঠেন বা উচ্চতার প্রতি সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, বিমানের চাপ, উচ্চতা পরিবর্তন ও ভারসাম্যহীনতা, এসব কারণেই শরীরে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

উচ্চতার পরিবর্তনে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়;

বিমান যখন আকাশে উঠে যায়, তখন হঠাৎ করে শরীর এক ধরনের চাপ পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে। কানের ভেতরের অংশ, যা ভারসাম্য রক্ষা করে, সেটি এই দ্রুত উচ্চতা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নেয়। এর ফলে কানে বন্ধ লাগা বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়, আমাদের শরীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য চোখ, কান ও মস্তিষ্কের সিগন্যালের উপর নির্ভর করে। কিন্তু বিমানে চলার সময় চোখের দেখা ও কানের ভারসাম্যের সংকেত এক না হওয়ায় মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় — এর ফলেই মাথা ঘোরে।

বায়ুচাপের পার্থক্য;

বিমানের কেবিনে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, তা মাটির সমান থাকে না। কেবিনের ভেতরে চাপ সাধারণত ৮০০০ ফুট উচ্চতার সমান থাকে, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে হালকা চাপ সৃষ্টি করে। এই পরিবর্তিত বায়ুচাপ অনেকের মাথায় চাপ, কান ব্যথা বা বমি ভাব তৈরি করতে পারে।

যাদের সাইনাস সমস্যা, কানের সংক্রমণ বা ঠান্ডা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ আরও তীব্র হয়।

অক্সিজেনের ঘাটতি ও পানিশূন্যতা;

বিমানের উচ্চতায় অক্সিজেনের ঘনত্ব কিছুটা কমে যায়। যদিও কেবিনে কৃত্রিমভাবে বাতাস সরবরাহ করা হয়, তবুও তুলনামূলক কম অক্সিজেন কিছু মানুষের মধ্যে ক্লান্তি বা মাথা ঝিমঝিম ভাব আনতে পারে।

এছাড়া বিমানের বাতাস অনেক শুকনো হয়, যা শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। দীর্ঘ ফ্লাইটে পানি কম খেলে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে, ফলে মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগতে পারে।

মানসিক চাপ ও ভয়ের প্রভাব;

অনেকেরই বিমানে ওঠার আগে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে। এই মানসিক চাপ শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদস্পন্দন দ্রুত করে এবং মাথা হালকা লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। একে বলা হয় এয়ার ট্রাভেল অ্যাংজাইটি।

বিশেষ করে যারা আগে কখনও উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেননি, তারা এমন উদ্বেগে বেশি ভোগেন।

ঘুম ও খাবারের প্রভাব;

ফ্লাইটের আগে যথেষ্ট ঘুম না হলে বা পেটে ভারী খাবার থাকলে শরীর সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। এতে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব বাড়ে। ফ্লাইটের আগে হালকা খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ঘুম নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

প্রতিকার ও পরামর্শ;

চিকিৎসকরা বলেন, বিমানে উঠলে মাথা ঘোরার সমস্যা থেকে বাঁচতে কিছু বিষয় মানা উচিত—

যাত্রার আগে হালকা খাবার খান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত কিছু খাবেন না।

পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন।

জানালার পাশে বসলে বাইরে তাকানো এড়িয়ে চলুন, এতে চোখ ও কানের সিগন্যালের ভারসাম্য ঠিক থাকে।

ফ্লাইট চলাকালীন সময় মাথা পেছনে হেলিয়ে রাখুন ও চোখ বন্ধ করুন, এতে শরীর দ্রুত মানিয়ে নেয়।

যাদের মোশন সিকনেস আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন বা মোশন ট্যাবলেট খেতে পারেন।

বিমানে উঠলে মাথা ঘোরা সাধারণ একটি বিষয়, যা অধিকাংশ সময় ক্ষতিকর নয়। শরীরের ভারসাম্য রক্ষা, মানসিক প্রশান্তি ও সঠিক অভ্যাসে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তবে বারবার এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি ও যত্ন নিলে আকাশযাত্রা হতে পারে আরামদায়ক ও নির্ভাবনাময়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন

বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন
বিমানে উঠলে মাথা ঘুরে কেন

অনেকে বিমানে উঠলেই মাথা ঘোরা, কানে বন্ধ লাগা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এটি সাধারণত “মোশন সিকনেস” বা গতিজনিত অসুস্থতার কারণে হয়। বিশেষ করে যারা প্রথমবার বিমানে ওঠেন বা উচ্চতার প্রতি সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, বিমানের চাপ, উচ্চতা পরিবর্তন ও ভারসাম্যহীনতা, এসব কারণেই শরীরে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

উচ্চতার পরিবর্তনে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়;

বিমান যখন আকাশে উঠে যায়, তখন হঠাৎ করে শরীর এক ধরনের চাপ পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে। কানের ভেতরের অংশ, যা ভারসাম্য রক্ষা করে, সেটি এই দ্রুত উচ্চতা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নেয়। এর ফলে কানে বন্ধ লাগা বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়, আমাদের শরীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য চোখ, কান ও মস্তিষ্কের সিগন্যালের উপর নির্ভর করে। কিন্তু বিমানে চলার সময় চোখের দেখা ও কানের ভারসাম্যের সংকেত এক না হওয়ায় মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় — এর ফলেই মাথা ঘোরে।

বায়ুচাপের পার্থক্য;

বিমানের কেবিনে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, তা মাটির সমান থাকে না। কেবিনের ভেতরে চাপ সাধারণত ৮০০০ ফুট উচ্চতার সমান থাকে, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে হালকা চাপ সৃষ্টি করে। এই পরিবর্তিত বায়ুচাপ অনেকের মাথায় চাপ, কান ব্যথা বা বমি ভাব তৈরি করতে পারে।

যাদের সাইনাস সমস্যা, কানের সংক্রমণ বা ঠান্ডা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ আরও তীব্র হয়।

অক্সিজেনের ঘাটতি ও পানিশূন্যতা;

বিমানের উচ্চতায় অক্সিজেনের ঘনত্ব কিছুটা কমে যায়। যদিও কেবিনে কৃত্রিমভাবে বাতাস সরবরাহ করা হয়, তবুও তুলনামূলক কম অক্সিজেন কিছু মানুষের মধ্যে ক্লান্তি বা মাথা ঝিমঝিম ভাব আনতে পারে।

এছাড়া বিমানের বাতাস অনেক শুকনো হয়, যা শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। দীর্ঘ ফ্লাইটে পানি কম খেলে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে, ফলে মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগতে পারে।

মানসিক চাপ ও ভয়ের প্রভাব;

অনেকেরই বিমানে ওঠার আগে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে। এই মানসিক চাপ শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদস্পন্দন দ্রুত করে এবং মাথা হালকা লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। একে বলা হয় এয়ার ট্রাভেল অ্যাংজাইটি।

বিশেষ করে যারা আগে কখনও উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেননি, তারা এমন উদ্বেগে বেশি ভোগেন।

ঘুম ও খাবারের প্রভাব;

ফ্লাইটের আগে যথেষ্ট ঘুম না হলে বা পেটে ভারী খাবার থাকলে শরীর সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। এতে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব বাড়ে। ফ্লাইটের আগে হালকা খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ঘুম নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

প্রতিকার ও পরামর্শ;

চিকিৎসকরা বলেন, বিমানে উঠলে মাথা ঘোরার সমস্যা থেকে বাঁচতে কিছু বিষয় মানা উচিত—

যাত্রার আগে হালকা খাবার খান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত কিছু খাবেন না।

পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন।

জানালার পাশে বসলে বাইরে তাকানো এড়িয়ে চলুন, এতে চোখ ও কানের সিগন্যালের ভারসাম্য ঠিক থাকে।

ফ্লাইট চলাকালীন সময় মাথা পেছনে হেলিয়ে রাখুন ও চোখ বন্ধ করুন, এতে শরীর দ্রুত মানিয়ে নেয়।

যাদের মোশন সিকনেস আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন বা মোশন ট্যাবলেট খেতে পারেন।

বিমানে উঠলে মাথা ঘোরা সাধারণ একটি বিষয়, যা অধিকাংশ সময় ক্ষতিকর নয়। শরীরের ভারসাম্য রক্ষা, মানসিক প্রশান্তি ও সঠিক অভ্যাসে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তবে বারবার এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি ও যত্ন নিলে আকাশযাত্রা হতে পারে আরামদায়ক ও নির্ভাবনাময়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত