প্রতি মাসেই নারীরা যে শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যান, তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো মাসিকের সময় তলপেট বা কোমরের ব্যথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea)। এই ব্যথা অনেক সময় এত তীব্র হয় যে দৈনন্দিন কাজেও প্রভাব পড়ে। তবে সুখবর হলো— ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় মেনে চললে পিরিয়ডের এই ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
গরম সেঁক উপকারে আসে;
তলপেটে গরম পানির ব্যাগ বা হট ওয়াটার বোতল দিয়ে সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পেশি শিথিল হয়। এতে ব্যথা ও ক্র্যাম্প অনেকটাই কমে যায়। চিকিৎসকরা বলেন, এটি প্রাকৃতিকভাবে ব্যথানাশক ওষুধের মতো কাজ করে। গরম সেঁক দিনে কয়েকবার ১০-১৫ মিনিট ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গরম পানি বা ভেষজ চা পান;
গরম পানি বা আদা, তুলসী, দারুচিনি, মধু মিশ্রিত হারবাল চা ব্যথা উপশমে দারুণ কার্যকর। এগুলো শরীরে প্রদাহ কমায়, পেশি শিথিল করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। বিশেষ করে আদা চা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও ক্র্যাম্প কমায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম;
পিরিয়ড চলাকালীন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি। অতিরিক্ত কাজ বা মানসিক চাপ ব্যথা আরও বাড়াতে পারে। শরীরকে শান্ত রাখলে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম;
অনেকেই মনে করেন পিরিয়ডের সময় বিশ্রামই যথেষ্ট, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে হালকা ব্যায়াম, হাঁটা বা যোগব্যায়াম করলে ব্যথা অনেকটাই কমে। বিশেষ করে “চাইল্ড পোজ”, “ক্যাট-কাউ পোজ” বা “বাটারফ্লাই পোজ” করার ফলে তলপেটের পেশি শিথিল হয় ও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া;
পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে অনেক খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়। তাই এই সময়ে খাদ্যতালিকায় আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। ডিম, কলা, দুধ, দই, ডার্ক চকোলেট, বাদাম ও শাকসবজি ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একই সঙ্গে বেশি তেল-ঝাল বা ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত।
পর্যাপ্ত পানি পান;
শরীরে পানির ঘাটতি হলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, যা ক্র্যাম্প বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং ব্যথা কিছুটা উপশম হয়। চাইলে লেবু বা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা;
পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ ও উদ্বেগ শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ব্যথা বাড়ায়। তাই এই সময়ে প্রিয় গান শোনা, বই পড়া বা রিল্যাক্সেশন টেকনিক মেনে চললে মন হালকা থাকে এবং ব্যথা কমে।
ক্যাফেইন ও লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা;
কফি, চা বা সফট ড্রিংকে থাকা ক্যাফেইন পেশি সংকোচন বাড়ায়, ফলে ব্যথা আরও তীব্র হয়। তেমনি অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যা ফুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করে। পিরিয়ডের সময় এসব খাবার কম খাওয়াই ভালো।
আদা ও দারুচিনির মিশ্রণ;
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে আদা ও দারুচিনি ব্যথা প্রশমনে দারুণ কাজ করে। আধা চা চামচ আদা গুঁড়া ও এক চিমটি দারুচিনি গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে ব্যথা অনেকটা কমে যায়।
পিরিয়ডের সময় ব্যথা একেবারে বন্ধ করা সম্ভব না হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম, গরম সেঁক ও কিছু ঘরোয়া টিপস মেনে চললে এটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে ব্যথা যদি নিয়মিত তীব্র হয় বা দৈনন্দিন কাজ বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নারীর শরীরের এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করাই হতে পারে ব্যথা নিয়ন্ত্রণের প্রথম পদক্ষেপ।