উমরাহ—আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহাসফর

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
উমরাহ—আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহাসফর
جبل الرحمة

উমরা পালন ইসলামের একটি ফজিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে বান্দা তার রবের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করে, আত্মাকে গুনাহের কলুষতা থেকে মুক্ত করে এবং আত্মিক জগতে এক নবজাগরণের সূচনা ঘটে। উমরা করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হন। এটি কেবল একটি সফর নয়, বরং জীবন পরিবর্তনের এক মহান উপলক্ষ। তাই উমরার আগে আত্মিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি।

উমরার পূর্বে নিয়ত শুদ্ধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদেরকে তো আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে।”
— সূরা আল-বায়্যিনাহ: ৫

উমরার উদ্দেশ্য হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। খ্যাতি, ছবি তোলা বা আত্মপ্রদর্শনের কোনো চিন্তা যেন অন্তরে না আসে। নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখলে ইবাদতের মূল সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।

উমরা এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে একজন মুসলিম আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর ক্ষমা অর্জনের মহান সুযোগ লাভ করে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— “যে ব্যক্তি হজ বা উমরা করল এবং কোনো অশ্লীল কথা বা গুনাহে লিপ্ত হলো না, সে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।” — সহিহ বুখারি: ১৫২১

তাই উমরার আগে অন্তরকে এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন মানুষ হাদিসে বর্ণিত সেই নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসতে পারে এবং জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, প্রতিটি আমলের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি। উমরার প্রতিটি রুকন—ইহরাম পরা, পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পর্বতের মধ্যে সাঈ—সবকিছুর ভেতরেই গভীর শিক্ষা নিহিত আছে। ইহরাম আমাদের শেখায়, আল্লাহর দরবারে সবাই সমান; তাওয়াফ স্মরণ করায়, আমাদের জীবনও আল্লাহকেন্দ্রিক হওয়া উচিত; আর সাঈ আমাদের মনে করিয়ে দেয় হাজেরা (আ.)-এর তাওয়াক্কুল ও ধৈর্যের ইতিহাস। এসব আমল যেন কেবল শরীরের নয়, হৃদয়েরও ইবাদত হয়।

মক্কা ও মদিনা কেবল দুটি শহর নয়, বরং ইসলামের হৃদয়ভূমি। মক্কায় অবস্থিত কাবা আল্লাহর ঘর, আর মদিনায় রয়েছে নবী করিম ﷺ-এর রওজা মোবারক ও মসজিদে নববি। এই দুই শহরে অবস্থানকালে প্রতিটি মুহূর্ত শ্রদ্ধা, বিনয় ও ইবাদতের মধ্যে কাটানো উচিত। এমন সফরে সময় নষ্ট না করে কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, দোয়া ও জিকিরে আত্মার প্রশান্তি খুঁজে নেওয়া উচিত।

উমরার পথে অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের মুখোমুখি হতে হয়। বিমানবন্দরের অপেক্ষা, তীব্র গরম, ভিড় বা অনিদ্রা—সবই সফরের অংশ। এসব কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য ধারণ করা ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে মুসলমান কোনো দুঃখ, কষ্ট বা বিপদে পতিত হয়, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন।” তাই এসব কষ্টকেও রহমত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

উমরার সফরে কখনো সবকিছু প্রত্যাশামতো নাও হতে পারে, তবুও মনে রাখতে হবে—প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হয়তো তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ করছো অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” — সূরা আল-বাকারা: ২১৬

এই বিশ্বাসই সফরকে সহজ ও ফলপ্রসূ করে তোলে।

উমরার সময় দোয়া করার মুহূর্তগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। কাবা শরিফের সামনে, তাওয়াফের সময়, সাঈ করার মাঝে কিংবা মসজিদে হারামে নামাজের পর—যেখানেই সুযোগ পান, আল্লাহর দরবারে অন্তর উজাড় করে দোয়া করুন। নিজের, পরিবারের, মুসলিম উম্মাহর ও গোটা মানবজাতির জন্য কল্যাণ কামনা করুন।

আল্লাহর রহমত সীমাহীন। কোরআনে তিনি বলেন, “তোমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, দয়াময়। তিনি যদি মানুষকে তাদের কর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তাদেরকে অচিরেই শাস্তি দিতেন। কিন্তু তাদের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে, যার আগে তারা কোনো আশ্রয় পাবে না।” — সূরা কাহাফ: ৫৮

তাই অতীত যতই গুনাহে পূর্ণ হোক না কেন, আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা কখনোই দেরি নয়।

উমরা পালন করার সুযোগ পাওয়া এক বিরাট নেয়ামত। মুসলমানেরা সেখানে গিয়ে নবী করিম ﷺ-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। নবী করিম ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করে, সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমাকে সাক্ষাৎ করল।” — সহিহ বুখারি

মক্কা ও মদিনায় প্রবেশের মুহূর্তে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিন, যিনি আপনাকে এমন মহাসফরের সুযোগ দিয়েছেন।

সবশেষে মনে রাখতে হবে, উমরা কেবল একটি সফর নয়; এটি আত্মিক পরিবর্তনের এক সুবর্ণ সুযোগ। নবী করিম ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ বা উমরা পালন করে এবং কোনো গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসে।” চেষ্টা করুন এই সফর যেন আপনার জীবনে পরিবর্তনের সূচনা ঘটায়—আপনাকে আরও বিনয়ী, আল্লাহমুখী ও নেক আমলে উৎসাহী বানায়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

উমরাহ—আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহাসফর

উমরাহ—আত্মিক পরিশুদ্ধির এক মহাসফর
جبل الرحمة

উমরা পালন ইসলামের একটি ফজিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে বান্দা তার রবের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করে, আত্মাকে গুনাহের কলুষতা থেকে মুক্ত করে এবং আত্মিক জগতে এক নবজাগরণের সূচনা ঘটে। উমরা করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হন। এটি কেবল একটি সফর নয়, বরং জীবন পরিবর্তনের এক মহান উপলক্ষ। তাই উমরার আগে আত্মিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি।

উমরার পূর্বে নিয়ত শুদ্ধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদেরকে তো আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে।”
— সূরা আল-বায়্যিনাহ: ৫

উমরার উদ্দেশ্য হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। খ্যাতি, ছবি তোলা বা আত্মপ্রদর্শনের কোনো চিন্তা যেন অন্তরে না আসে। নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখলে ইবাদতের মূল সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।

উমরা এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে একজন মুসলিম আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর ক্ষমা অর্জনের মহান সুযোগ লাভ করে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— “যে ব্যক্তি হজ বা উমরা করল এবং কোনো অশ্লীল কথা বা গুনাহে লিপ্ত হলো না, সে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।” — সহিহ বুখারি: ১৫২১

তাই উমরার আগে অন্তরকে এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন মানুষ হাদিসে বর্ণিত সেই নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসতে পারে এবং জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, প্রতিটি আমলের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি। উমরার প্রতিটি রুকন—ইহরাম পরা, পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পর্বতের মধ্যে সাঈ—সবকিছুর ভেতরেই গভীর শিক্ষা নিহিত আছে। ইহরাম আমাদের শেখায়, আল্লাহর দরবারে সবাই সমান; তাওয়াফ স্মরণ করায়, আমাদের জীবনও আল্লাহকেন্দ্রিক হওয়া উচিত; আর সাঈ আমাদের মনে করিয়ে দেয় হাজেরা (আ.)-এর তাওয়াক্কুল ও ধৈর্যের ইতিহাস। এসব আমল যেন কেবল শরীরের নয়, হৃদয়েরও ইবাদত হয়।

মক্কা ও মদিনা কেবল দুটি শহর নয়, বরং ইসলামের হৃদয়ভূমি। মক্কায় অবস্থিত কাবা আল্লাহর ঘর, আর মদিনায় রয়েছে নবী করিম ﷺ-এর রওজা মোবারক ও মসজিদে নববি। এই দুই শহরে অবস্থানকালে প্রতিটি মুহূর্ত শ্রদ্ধা, বিনয় ও ইবাদতের মধ্যে কাটানো উচিত। এমন সফরে সময় নষ্ট না করে কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, দোয়া ও জিকিরে আত্মার প্রশান্তি খুঁজে নেওয়া উচিত।

উমরার পথে অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের মুখোমুখি হতে হয়। বিমানবন্দরের অপেক্ষা, তীব্র গরম, ভিড় বা অনিদ্রা—সবই সফরের অংশ। এসব কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য ধারণ করা ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে মুসলমান কোনো দুঃখ, কষ্ট বা বিপদে পতিত হয়, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন।” তাই এসব কষ্টকেও রহমত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

উমরার সফরে কখনো সবকিছু প্রত্যাশামতো নাও হতে পারে, তবুও মনে রাখতে হবে—প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হয়তো তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ করছো অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” — সূরা আল-বাকারা: ২১৬

এই বিশ্বাসই সফরকে সহজ ও ফলপ্রসূ করে তোলে।

উমরার সময় দোয়া করার মুহূর্তগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। কাবা শরিফের সামনে, তাওয়াফের সময়, সাঈ করার মাঝে কিংবা মসজিদে হারামে নামাজের পর—যেখানেই সুযোগ পান, আল্লাহর দরবারে অন্তর উজাড় করে দোয়া করুন। নিজের, পরিবারের, মুসলিম উম্মাহর ও গোটা মানবজাতির জন্য কল্যাণ কামনা করুন।

আল্লাহর রহমত সীমাহীন। কোরআনে তিনি বলেন, “তোমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, দয়াময়। তিনি যদি মানুষকে তাদের কর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তাদেরকে অচিরেই শাস্তি দিতেন। কিন্তু তাদের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে, যার আগে তারা কোনো আশ্রয় পাবে না।” — সূরা কাহাফ: ৫৮

তাই অতীত যতই গুনাহে পূর্ণ হোক না কেন, আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা কখনোই দেরি নয়।

উমরা পালন করার সুযোগ পাওয়া এক বিরাট নেয়ামত। মুসলমানেরা সেখানে গিয়ে নবী করিম ﷺ-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। নবী করিম ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করে, সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমাকে সাক্ষাৎ করল।” — সহিহ বুখারি

মক্কা ও মদিনায় প্রবেশের মুহূর্তে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিন, যিনি আপনাকে এমন মহাসফরের সুযোগ দিয়েছেন।

সবশেষে মনে রাখতে হবে, উমরা কেবল একটি সফর নয়; এটি আত্মিক পরিবর্তনের এক সুবর্ণ সুযোগ। নবী করিম ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ বা উমরা পালন করে এবং কোনো গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসে।” চেষ্টা করুন এই সফর যেন আপনার জীবনে পরিবর্তনের সূচনা ঘটায়—আপনাকে আরও বিনয়ী, আল্লাহমুখী ও নেক আমলে উৎসাহী বানায়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত