মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা, জেনে নিন কুরআনের আলোকে

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা, জেনে নিন কুরআনের আলোকে

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবজীবন ও জগৎ সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে পবিত্র কুরআন। এটি মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও জীবনের দিকনির্দেশনা বদলে দিয়েছে— খুলে দিয়েছে অন্তরের সম্ভাবনার দ্বার, দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। কুরআন যেমন জীবনের কথা বলে, তেমনি স্মরণ করিয়ে দেয় যে মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি অকৃতজ্ঞ।” (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)

“নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনি মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, জানেন গর্ভে কী আছে। কেউ জানে না আগামীকাল তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।” (সূরা লোকমান, আয়াত ৩৪)

“দূরাচারীরা কি মনে করে যে, তাদের জীবন ও মৃত্যু, বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জীবন ও মৃত্যুর সমান হবে? কত ভ্রান্ত ধারণা ওদের!” (সূরা জাসিয়া, আয়াত ২১)

কুরআন আমাদের জানায়, মৃত্যু অবধারিত এক সত্য। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দেওয়া হবে, আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। যেমন বলা হয়েছে,
“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারও মৃত্যু হতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কার দিই।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)

আল্লাহ আরও বলেন,
“সত্যের পথে তোমরা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেই সমবেত হবে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৮)

“প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিয়ামতের দিনে তোমরা পূর্ণ প্রতিফল পাবে। যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে ও জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই-ই সফল। দুনিয়ার জীবন তো এক মরীচিকা ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)

মানবজীবন আসলে পরীক্ষা ও অস্থায়িত্বের প্রতীক। কুরআন বলে,
“হে নবী! তোমার পূর্বে কোনো মানুষকেই আমি অমরত্ব দিইনি। তোমার মৃত্যু হলে কি তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে?” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৪)

“প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের পরীক্ষা করি— মন্দ ও ভালো অবস্থার মাধ্যমে। আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)

আল্লাহ আত্মার রহস্য নিয়েও বলেন,
“আল্লাহ মৃত্যু এলে আত্মাকে তুলে নেন এবং যাদের মৃত্যু এখনো হয়নি তাদের ঘুমের সময় আত্মাকে তুলে নেন। তারপর যার মৃত্যু নির্ধারিত তার আত্মা রেখে দেন, অন্যদের ফিরিয়ে দেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। যারা চিন্তা করে তাদের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” (সূরা জুমার, আয়াত ৪২)

জীবন ও মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকটেই প্রত্যাবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
“হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই, আমারই কাছে সবাই ফিরে আসবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃতরা দ্রুত বেরিয়ে আসবে, সেদিন তাদের সমবেত করা খুব সহজ এক কাজ হবে।” (সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪৪)

“আমি বিধান দিয়েছি যে মৃত্যু সবসময় তোমাদের মধ্যে বিরাজ করবে। আমি চাইলে তোমাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারি, এমন রূপে সৃষ্টি করতে পারি যা তোমরা জানো না।” (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০-৬১)

মানুষ যতই পালাতে চায়, মৃত্যু থেকে মুক্তি নেই।
“বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাও, সে মৃত্যুরই মুখোমুখি হতে হবে তোমাদের। তারপর তোমরা হাজির হবে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে, যিনি তোমাদের সব কর্ম প্রকাশ করবেন।” (সূরা জুমআ, আয়াত ৮)

কুরআন স্পষ্ট করে দিয়েছে, মৃত্যু শয্যায় এসে তওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না।
“যারা সারাজীবন অন্যায় করে মৃত্যু শয্যায় এসে বলে ‘আমি এখন তওবা করলাম’— তাদের তওবা গ্রহণ করা হয় না। আর যারা অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৮)

কিন্তু যারা মুক্তমন নিয়ে সত্যকে শোনে ও গ্রহণ করে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালীন সফলতা।
“যারা মুক্ত মনে শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। আল্লাহ কিয়ামতের দিনে মৃতদের পুনর্জীবিত করবেন, তারপর তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।” (সূরা আনআম, আয়াত ৩৬)

“তিনিই নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের সৃষ্টি করেন, আবার প্রাণকে করেন নিষ্প্রাণ। ধূসর জমিনকে তিনি সজীব করেন। এমনভাবেই তোমাদেরকেও মৃত অবস্থার পর পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা রূম, আয়াত ১৯)

এই আয়াতগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়— জীবন ক্ষণস্থায়ী, মৃত্যু অনিবার্য এবং পুনরুত্থান নিশ্চিত। জ্ঞানী সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়ার অস্থায়ী জীবনে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি নেয়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা, জেনে নিন কুরআনের আলোকে

মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা, জেনে নিন কুরআনের আলোকে

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবজীবন ও জগৎ সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে পবিত্র কুরআন। এটি মানুষের চিন্তা, চরিত্র ও জীবনের দিকনির্দেশনা বদলে দিয়েছে— খুলে দিয়েছে অন্তরের সম্ভাবনার দ্বার, দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। কুরআন যেমন জীবনের কথা বলে, তেমনি স্মরণ করিয়ে দেয় যে মৃত্যু জীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি অকৃতজ্ঞ।” (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)

“নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনি মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, জানেন গর্ভে কী আছে। কেউ জানে না আগামীকাল তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।” (সূরা লোকমান, আয়াত ৩৪)

“দূরাচারীরা কি মনে করে যে, তাদের জীবন ও মৃত্যু, বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জীবন ও মৃত্যুর সমান হবে? কত ভ্রান্ত ধারণা ওদের!” (সূরা জাসিয়া, আয়াত ২১)

কুরআন আমাদের জানায়, মৃত্যু অবধারিত এক সত্য। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দেওয়া হবে, আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। যেমন বলা হয়েছে,
“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারও মৃত্যু হতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কার দিই।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)

আল্লাহ আরও বলেন,
“সত্যের পথে তোমরা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করো বা নিহত হও, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছেই সমবেত হবে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৮)

“প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিয়ামতের দিনে তোমরা পূর্ণ প্রতিফল পাবে। যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে ও জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই-ই সফল। দুনিয়ার জীবন তো এক মরীচিকা ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)

মানবজীবন আসলে পরীক্ষা ও অস্থায়িত্বের প্রতীক। কুরআন বলে,
“হে নবী! তোমার পূর্বে কোনো মানুষকেই আমি অমরত্ব দিইনি। তোমার মৃত্যু হলে কি তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে?” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৪)

“প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের পরীক্ষা করি— মন্দ ও ভালো অবস্থার মাধ্যমে। আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৫)

আল্লাহ আত্মার রহস্য নিয়েও বলেন,
“আল্লাহ মৃত্যু এলে আত্মাকে তুলে নেন এবং যাদের মৃত্যু এখনো হয়নি তাদের ঘুমের সময় আত্মাকে তুলে নেন। তারপর যার মৃত্যু নির্ধারিত তার আত্মা রেখে দেন, অন্যদের ফিরিয়ে দেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। যারা চিন্তা করে তাদের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।” (সূরা জুমার, আয়াত ৪২)

জীবন ও মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকটেই প্রত্যাবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
“হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই, আমারই কাছে সবাই ফিরে আসবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃতরা দ্রুত বেরিয়ে আসবে, সেদিন তাদের সমবেত করা খুব সহজ এক কাজ হবে।” (সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪৪)

“আমি বিধান দিয়েছি যে মৃত্যু সবসময় তোমাদের মধ্যে বিরাজ করবে। আমি চাইলে তোমাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারি, এমন রূপে সৃষ্টি করতে পারি যা তোমরা জানো না।” (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০-৬১)

মানুষ যতই পালাতে চায়, মৃত্যু থেকে মুক্তি নেই।
“বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাও, সে মৃত্যুরই মুখোমুখি হতে হবে তোমাদের। তারপর তোমরা হাজির হবে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে, যিনি তোমাদের সব কর্ম প্রকাশ করবেন।” (সূরা জুমআ, আয়াত ৮)

কুরআন স্পষ্ট করে দিয়েছে, মৃত্যু শয্যায় এসে তওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না।
“যারা সারাজীবন অন্যায় করে মৃত্যু শয্যায় এসে বলে ‘আমি এখন তওবা করলাম’— তাদের তওবা গ্রহণ করা হয় না। আর যারা অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৮)

কিন্তু যারা মুক্তমন নিয়ে সত্যকে শোনে ও গ্রহণ করে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালীন সফলতা।
“যারা মুক্ত মনে শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। আল্লাহ কিয়ামতের দিনে মৃতদের পুনর্জীবিত করবেন, তারপর তারা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।” (সূরা আনআম, আয়াত ৩৬)

“তিনিই নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের সৃষ্টি করেন, আবার প্রাণকে করেন নিষ্প্রাণ। ধূসর জমিনকে তিনি সজীব করেন। এমনভাবেই তোমাদেরকেও মৃত অবস্থার পর পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা রূম, আয়াত ১৯)

এই আয়াতগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়— জীবন ক্ষণস্থায়ী, মৃত্যু অনিবার্য এবং পুনরুত্থান নিশ্চিত। জ্ঞানী সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়ার অস্থায়ী জীবনে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি নেয়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত