চট্টগ্রাম নগরীর দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক মো. ইসমাইল (৪৭)-কে এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। বিচারক মো. সাইদুর রহমান গাজী সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন। আদালত বলেছে, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভিকটিম ছাত্রকে মাদরাসার হিফজুল কোরআন বিভাগে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক মো. ইসমাইল ওই ছাত্রকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করতেন। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে মাদরাসার ছয় তলার গোসলখানায় ওই ছাত্রকে জোরপূর্বক বলাৎকার করা হয়। ঘটনা ছাত্রের সহপাঠীদের মাধ্যমে মাদরাসা পরিচালনা কমিটিতে প্রকাশ পেলে ছাত্রের মা চকবাজার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করে এবং তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে ২৯ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০২৩ সালের ১৪ জুন চার্জগঠন শেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় ভিকটিম, বাদী, চিকিৎসক, তদন্ত কর্মকর্তা ও মাদরাসা কমিটির সদস্যসহ নয়জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তিতর্কের পর আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি অ্যাডভোকেট হায়দার মো. সোলাইমান ও অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আকবর আলী। তারা বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে আদালত শিশু নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ফোরকান জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
এই ঘটনার পর শিক্ষা ও ধর্মীয় মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সমাজকর্মীরা বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অপরাধ নৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে নিন্দনীয়, এবং কঠোর শাস্তি সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এই রায় শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং অন্য অপরাধীদের জন্যও এটি সতর্কবার্তা।