জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের জিল বাংলা চিনিকল আখের অভাবে কিছুদিন আগেই বন্ধ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় এবারও লোকসান হবে মিলের। অথচ বহু জমিতে এখনো আখ রয়ে গেছে। চিনিকলের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় চাষিরা গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে আখ বিক্রি করছেন।
মিল সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৪১ দিনে ৩৫ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে দুই হাজার ৩২২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে মিলটি। ২ ডিসেম্বর জিল বাংলা সুগার মিল ২০২২-২০২৩ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু করে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার টন আখ মাড়াই করে চার হাজার ৭৬০ টন চিনি উৎপাদনের। কিন্তু ৬০ দিন আখ মাড়াইয়ের পরিকল্পনা নিয়ে মিল চালু হলেও ৪১ দিনের মাথায় ১২ জানুয়ারি আখের অভাবে মিল বন্ধ হয়ে যায়।
আখের অভাবে মিল বন্ধ হলেও মিলের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় এখনো শত শত একর জমিতে আখ রয়েছে। কিন্তু চাষিরা সেসব আখ চিনিকলে না দিয়ে গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
আখচাষিরা বলছেন, আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল। দেড় বছরে ফসল ঘরে আসে, যেখানে অন্যান্য ফসল আসে তিনটির মতো। এতে গুড় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে যে দাম পাওয়া যায় তা সুগার মিলের দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়া আখের দাম পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষের ধীরগতি এবং কঠিন প্রক্রিয়ায় টাকা দেওয়ার বিষয়ে তারা বিরক্ত। সারা বছর আখ চাষ করে নিজের টাকায় তা কেটে গাড়িভাড়া দিয়ে মিলে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু মোবাইলে টাকা আসে অনেক পরে। ধার-কর্জ করে মিলে আখ দিয়ে টাকার জন্য বসে থাকতে হয়। অন্যদিকে গুড় উৎপাদনকারীরা দ্বিগুণ মূল্যে অগ্রিম টাকা দিয়ে আখ কিনে নেন, আখের ওজনেও তারা লাভবান হন।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের আখচাষিরা অভিযোগ করেন, ৪০ মণ আখ গুড়ের জন্য বিক্রি করলে তারা ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পান। আর সুগার মিলে ৪০ মণ আখ বিক্রি করলে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা। এর মধ্যে আবার গাড়িভাড়া খরচ হয়। তাদের প্রশ্ন, এ অবস্থায় তারা নিজের ফসল লোকসান দিয়ে কেন সুগার মিলে বিক্রি করবেন।
বকশীগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়নের এক আখচাষি বলেন, ‘গাড়িপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি পেলে সুগার মিলে কেন লস দিয়ে বিক্রি করব?’
বকশিগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়নের এক গুড় উৎপাদনকারী জানান, মেরুরচর ইউনিয়নেই ২০টি কলে আখ মাড়াই হয়। ২০টি কল দিনে আড়াই হাজার মণ আখ মাড়াই করছে।
আখচাষিরা জানিয়েছেন, আখের দাম নগদে পরিশোধ ও ন্যায্য বাজারমূল্য পেলে সুগার মিলে আখ দিতে তারা প্রস্তুত।
এদিকে মিলের মাঠপর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সাবজোন প্রধান এবং সিডিএ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা মাঠে কাজ করে আখের উৎপাদন বাড়াচ্ছি, কিন্তু বেশি দাম পেয়ে চাষিরা আখ মিলে না দিয়ে মাড়াই কলে দিচ্ছেন। আমরা তাদের বাধাও দিতে পারছি না। আখের মূল্যবৃদ্ধি করা ছাড়া আর চাষিদের মিলমুখী করা যাচ্ছে না।’
জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান বলেন, ‘দামের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’