জামালপুরের বকশীগঞ্জের বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুমকে বহিস্কারের দাবিতে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে ওই পরিষদের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (৯ মে) বগারচর ইউনিয়নের ঘাসিরপাড়া গ্ৰামের বাসেদ মেম্বারের বাড়িতে বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে চেয়ারম্যানের বহিস্কারের দাবী করেন ১১জন ইউপি সদস্য।
জানা যায়,রবিবার (৭ মে) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে তাঁকে বহিস্কারের আবেদন করেন বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন ইউপি সদস্য।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুম। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে একক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সকল কাজ সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে সরকারি সকল বরাদ্দ নিজের মতো করে খরচ করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি তিনি ইউপি সদস্য ও সাধারণ মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কল রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন ওই যুবলীগ নেতা।এছাড়াও ৪০ দিনের অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকদের কাছে ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয় যা জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল চেয়ারম্যান মাসুম প্রামাণিকের নিজ গ্রাম আলীরপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম দুলালকে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যার ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তিনি এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এসব নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, খুনোখুনির ঘটনায় ৭ মে বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন সাধারণ সদস্য ও ৩ জন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অনাস্থা দিয়ে তাঁকে বহিস্কারের আবেদন করেন। অনাস্থা প্রস্তাবের লিখিত অনুলিপি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্য জানান, চেয়ারম্যানের মনে যা চায় তাই তিনি করেন। মেম্বারদের সাথে পরামর্শ না করেই সরকারি বরাদ্দ যাচ্ছেতাই করেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।
একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও হত্যার মামলার বিষয়ে জানতে আত্মগোপনে থাকা বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান মাসুম প্রামাণিককে ফোন করা হলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগতভাবে যা হয়, তাই করা হবে।