পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের রাষ্ট্রদূত কোনো ‘সুখবর দিতে পারেননি’। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত সাহেব আসছিলেন। আমরা তাকে বললাম যে আপনি এই প্রজেক্টটা কতদিন ধরে নিয়েছেন, কিন্তু ঝুলিয়ে রাখছেন। উনি আগে বলছেন যে সুখবর দেবেন। কিন্তু সুখবর তিনি দিতে পারেননি।
চীনা রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, তারা (মিয়ানমার সরকার) আগের চুক্তি অনুযায়ী এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নেওয়ার জন্য, সুখবর শুধু এটাই।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।
চীনের সঙ্গে ২০২১ সালের জানুয়ারির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। কিন্তু এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। সেসময় ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পরীক্ষামূলকভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরুর পরিকল্পনা কথা বাংলাদেশ সরকার বললেও সেটা আর হয়নি।
বিশাল ওই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বছরের পর বছর শরণার্থী শিবির পরিচালনা করতে গিয়ে আর্থ-সামাজিক চাপ সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মিয়ানমার সরকার আমাদের চুক্তিকে সম্মান করবে। তারা তাদের রোহিঙ্গাগুলিকে নিয়ে যাবে। এখনো বলছে সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি দিবে।
“তৃতীয়ত, তারা পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে পারে। কিন্তু এতদিন হল, সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয় নাই। তাদের মাঝে মনে হয় না আগ্রহ আছে পাঠানোর। এবারও আমরা চায়নিজদেরকে বললাম, কিন্তু তারা বললো যে আগ্রহ আছে।”
মন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে কীভাবে মিয়ানমারে পাঠানো যায়, তার কিছু কারিগরি দিন নিয়ে ‘আলাপ’ চলছে। তবে কবে সেটা হবে, সেরকম কোনো তারিখ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি।
“আপনারা জানেন, আগে দুই দুইবার ব্যাচ পাঠানো ঠিক করলাম, কিন্তু পরে আর হল না। কিন্তু এখন আর ওই রাখ-ঢাক দিয়ে আমরা করতে চাই না। দেখি, পাঠাইতে পারি কিনা। ওইদিক থেকে উৎসাহ অনেক কম। তারা নিজেদের সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, “সমস্যা যেটা হয়েছে, যখন তারা ওখান থেকে ফিরে আসে, তখন তো তারা নির্যাতিত হচ্ছিল। তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছিল, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তখন তারা পালায়ে আসছে, কোনো ডকুমেন্ট নিয়ে আসেনি। এখন মিয়ানমার সরকার ডকুমেন্টের ওপর খুব জোর দিচ্ছে। এটা একটা সমস্যা।
“তারা কিছু কিছু অ্যাপ্রুভ করেছে, কিন্তু বাচ্চা অ্যাপ্রুভ করে নাই। অথবা মহিলা করেছে, স্বামী করে নাই। পরিবার ভেঙে ফেলছে। আমরা বলছি, এইসব আমরা মানি না। গেলে পুরো ফ্যামিলি যাবে। এইসব নিয়া এখনো আমরা দেনদরবার করতেছি।”
মন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে মিয়ানমার থেকে সীমান্তের এপারে গোলা এসে পড়ার যে ঘটনা ঘটছিল, ‘চীনকে বলার পর’ তা কমেছিল। কিন্তু মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ‘কিছু করতে পারেননি’।
সীমান্তের শূন্য রেখায় যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আছে, তাদেরকে মিয়ানমারের ভেতরে পাঠানোর জন্যও চীনকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান মোমেন।
“আমরা বলেছি যে ওদেরকে মিয়ানমারের ভেতরে নিয়ে যাও। কারণ ওরা ওখানে থাকলে আমাদের একটা ভয় থাকে যে কখন পাড়ি দিতে চাইবে। দেখা যাক কি করা যায়।”
মিয়ানমারের সাথে জাপানেরও সম্পর্ক ‘খুব ভালো’ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার জাপানকেও অনুরোধ করেছে, তবে তারা চীনের মত সরাসরি এগিয়ে আসেনি বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নভেম্বরের শেষে জাপানে গেলে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হবে।