শাহরুখ খান-গৌরি জুটিকে বলা হয় বলিউডের অন্যতম সফল এবং আদর্শ জুটি। সময়ের পরিক্রমায় যেখানে অনেক সম্পর্কই ঠুনকো হয়ে যায়, সেখানে শাহরুখ-গৌরি আজও একে অপরের হাতে হাত রেখে আছেন। তাই বিনোদন জগতে ভালোবাসার অনন্য নজির খুঁজলে এ জুটির নাম থাকবে তালিকার শীর্ষেই।
শাহরুখ খান যখন একজন সাধারণ যুবক হয়ে বলিউডে পায়ের নিচে মাটি খুঁজছেন, তখন তার হাত ধরেছিলেন গৌরি। এরপর কঠোর পরিশ্রম এবং নিজ অভিনয়গুণে শাহরুখ হয়েছেন বলিউডের খ্যাতনামা সুপারস্টার। কিন্তু গৌরির প্রতি ভালোবাসায় আজও কোনো কমতি নেই বলিউড বাদশাহর। তাই এখনও তাদের বিবাহিত জীবন অনেকের কাছেই অনুকরণীয় নজির।
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে শাহরুখ ও গৌরি পরস্পরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে সেই বিয়ের সময়ের তারা দুজনই পরস্পরের ধর্ম অনুযায়ী নাম পরিবর্তন করেছিলেন। এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গৌরিকে বিয়ে করার সময় শাহরুখ নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন “জিতেন্দ্র কুমার তুলি”। মূলত দুই কিংবদন্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবেই এ নাম বেছে নিনিয়েছিলেন বলিউড বাদশাহ। তাছাড়া জিতেন্দ্র কুমার তুলি নামটি রাখার পেছনেও দুটি কারণ আছে। এক. শাহরুখের দাদির মনে হতো, বলিউড অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তার নাতির চেহারার মিল রয়েছে। দুই. বলিউডের আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমারের প্রকৃত ডাকনাম ছিল তুলি।
শাহরুখের পাশাপাশি গৌরি নিজেও বিয়ের সময়ে নাম পরিবর্তন করেছিলেন। কিং খান যেখানে বিয়ের জন্য হিন্দু নাম বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে গৌরি বেছে নিয়েছিলেন মুসলিম নাম। বিয়ের সময় নিজের নাম হিসেবে শাহরুখপত্নী বেছে নিয়েছিলেন “আয়েশা”।
নাম নিয়ে অবশ্য শাহরুখ-গৌরির বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা এখানেই প্রথম ছিল না। নিজের পরিবারের সঙ্গে প্রথমবারের মতো শাহরুখের আলাপ করাতে গিয়ে তাকে “অভিনব” হিসেবে পরিচিত করিয়েছিলেন গৌরি। গৌরির মনে হয়েছিল, হিন্দু হিসেবে তার পরিবারের কাছে শাহরুখের অবস্থান ইতিবাচক করবে।
অনেকেই হয়তো জানেন না, আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে কোর্ট ম্যারেজ সেরে ফেলেছিলেন শাহরুখ-গৌরি। তবে এ বিষয়েও এ জুটির একটি মজার গল্প আছে। বিয়ের সময়ে শাহরুখের বয়স ছিল ২৬। অন্যদিকে, গৌরি ছিলেন ২১ বছর বয়সী তরুণী। একে তো মুসলমান, তার ওপর তখন সবেমাত্র বলিউডে নিজের পায়ের তলায় মাটি খুঁজছেন শাহরুখ। তাই শাহরুখের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে গৌরির অভিভাবকের ছিল ঘোর আপত্তি।
শুধু তাই না, শাহরুখকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে গৌরি অটল থাকায় একপর্যায়ে গৌরির মা অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন। তবে সৌভাগ্যবশত তিনি বেঁচে যান। এরপর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে শাহরুখ-গৌরি দুজনই জানান, তারা ইতোমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছেন। যদিও তখনো মাত্রই তারা কোর্ট ম্যারেজের জন্য নিবন্ধন করলেও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। তবে যাই হোক, নিজের মেয়ের প্রতি শাহরুখের একাগ্র ভালোবাসা দেখে গৌরির অভিভাবক বিয়েতে রাজি হন।
শাহরুখ যখন দিল্লিতে থাকতেন, তখনই গৌরির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৮৪ সালে এক বন্ধুর পার্টিতে তাদের প্রথম দেখা হয়। তখন শাহরুখের বয়স ১৮ আর গৌরীর ১৪ বছর। প্রথম পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তা তুমুল প্রেমে গড়াতে সময় নেয়নি।
তবে প্রেমিক হিসেবে শাহরুখ একটু বেশিই অধিকার খাটাতে চাইতেন। বিষয়টি আবার গৌরির অপছন্দ ছিল বলে তিনি শাহরুখের সঙ্গের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন এবং একসময় দিল্লি ছেড়ে মুম্বাইয়ে চলে আসেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা শাহরুখও হাল ছাড়ার পাত্র নন। তিনিও মুম্বাইয়ে চলে আসেন।
যদিও গৌরি কোথায় থাকেন, তা শাহরুখের জানা ছিল না। তবে সমুদ্র যে গৌরির ভীষণ প্রিয়, সেটা ঠিকই শাহরুখ জানতেন। তাই মুম্বাইয়ে সমুদ্র সৈকতগুলোতে তিনি গৌরিকে খুঁজতে থাকেন। কয়েকটি সৈকতে খোঁজার পর আচমকা গৌরীর দেখা পান শাহরুখ। শাহরুখকে চোখের সামনে দেখে গৌরিরও তখন চক্ষু চড়কগাছ। এরপর আবারও তাদের সম্পর্কের সূচনা হয়। সম্পর্কে বাধা এলেও সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর বিয়ে করেন শাহরুখ ও গৌরী। বর্তমানে তাদের সংসার আলো করে আছে দুই ছেলে আরিয়ান, আব্রাহাম ও এক কন্যা সুহানা।
শাহরুখ খানকে সর্বশেষ বড়পর্দায় দেখা গিয়েছিল গত ২৫ জানুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত “পাঠান” সিনেমায়। অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রটি ভারতের পঞ্চম সিনেমা হিসেবে বিশ্বব্যাপী এক হাজার কোটি রুপির বেশি আয় করে।
সামনে শাহরুখকে দেখা যাবে “জাওয়ান” সিনেমায়। এতে কিং খানের সঙ্গে আছেন নয়নতারা, বিজয় সেথুপতি, সানিয়া মালহোত্রা, প্রিয়ামনি, সুনীল গ্রোভারসহ অনেকে। অতিথি চরিত্রে হাজির হবেন দীপিকা পাড়ুকোন ও থালাপতি বিজয়ের মতো তারকা। ছবিটি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।