ঝিনাইদহ-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের পক্ষে ভোট চাইতে না যাওয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পে কর্মরত এক নারী শ্রমিকের কাজ ও ভাতা বাতিলের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল হাইয়ের অনুসারী এক নারী ইউপি সদস্য এই হুমকি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই নারী পারুল খাতুন শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের বন্দেখালী গ্রামের বাসিন্দা পারুল খাতুন জানান, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের আওতাধীন ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমাকে সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য আকলিমা খাতুন বলেন তোমাকে আমার সঙ্গে নৌকা প্রতিকের পক্ষে ভোট চাইতে যেতে হবে। আমি অস্বীকার করলে তখন উনি আমাকে বলেন, তুমি যদি নৌকার ভোট চাইতে না যাও তোমার চাকরি থাকবে না ও বেতন-ভাতা পাবা না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে এবং শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যদি ভুক্তভোগী অভিযোগ দাখিল করে থাকেন সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের পক্ষে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে শৈলকুপা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। বগুড়া ইউনিয়নের দোহানাগিরাট গ্রামের ইউনুস আলী নামে এক সমর্থক এ জিডি করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারে শৈলকুপা উপজেলার শিতালী বাজারে ট্রাক মার্কার পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে দেখি আগের দিনের কোনো পোস্টার ও ব্যানার নেই। স্থানীয় এক চায়ের দোকানির কাছে জিজ্ঞাসা করলে ওই নায়েব আলী শেখ ও সেমন্ত হোসেন নামের দুজন পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়েছেন বলে জানান। এই দুই ব্যক্তি ট্রাক মার্কার নির্বাচনী প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আবারও প্রমাণিত
গত ১৮ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গত ১৬ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই তার ব্যবহৃত পাজেরো কালো রংয়ের জিপগাড়ি ও আরও কমপক্ষে সাদা রংয়ের ৩টি বড় মাইক্রোবাসসহ মির্জাপুর ইউনিয়নের চড়িয়ারবিল বাজারে অবস্থিত আমার সমর্থকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। ফাঁকা ঘরের দেয়ালে ঝোলানো আমার ছবি সংবলিত ব্যানার টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে সেটি নিয়ে যান। এসময় আব্দুল হাইয়ের সাথে থাকা সন্ত্রাসী বাহিনী অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ও আমার পক্ষে কেউ ভোট করলে তাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
এদিকে তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাই নিজ গাড়িসহ অপর দুইটি গাড়ি যোগে ১৬ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের এক সমর্থকের কার্যালয়ে প্রবেশ করে সেখানে টানানো স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছবি ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। ছেঁড়া পোস্টার ও ছবি কার্যালয়ের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের এ কর্মকাণ্ড গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১) (ক) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে প্রতীয়মান হয়।