২০২৩ সালে ৪৭.৩৯ বিলিয়ন ডলার তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছিল ৪৫.৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী বছরে ৩.৬৭% রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদায়ী বছরে ১২ মাসের পাঁচ মাস কম রপ্তানি হলেও সাত মাসে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছিল। অর্থাৎ খাতটি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা পোশাক খাতের জন্য ২০২৩ সালকে অশান্ত হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।
মাসভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছিল যথাক্রমে ৮.২৪% ও ১২.৩১%। দেশে রপ্তানি আয় এসেছিল ৪.৪২ বিলিয়ন ডলার ও ৩.৯৯৪ বিলিয়ন ডলার।
তবে মার্চ ও এপ্রিলে রপ্তানি ১.০৪% ও ১৫.৪৮% কমে যায়। ওই দুই মাসে রপ্তানি আয় আসে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার ও ৩.৩২ বিলিয়ন ডলার।
মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই পাঁচ মাসে আয় আবারও বেড়েছিল। এরমধ্যে যথাক্রমে মে মাসে এসেছে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার, জুনে ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার, জুলাইয়ে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৪.০৪ বিলিয়ন ডলার ও সেপ্টেম্বরে ৩.৯১ বিলিয়ন ডলার।
আবার শেষ তিন মাসেও মন্দাভাব চলতে থাকে। এরমধ্যে অক্টোবরে ১৩.৯৩% কমে আসে ৩.১৬ বিলিয়ন ডলার, নভেম্বরে ৭.৪৫% কমে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার, আর বছরের শেষ মাসে ২.৩৫% কমে ৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট বিবেচনায় ২০২৩ সালে পোশাক রপ্তানির অস্থিরতার চিত্র বিরল বলে অভিহিত করেছেন রপ্তানিকারকরা।
২০২৩ সালের রপ্তানি প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “পুরো বছরে (২০২৩) বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্য ও চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে।”
“আমরা ভালো করেছি। গ্যাসের ঘাটতি, বিদ্যুতের ঘাটতি, বন্ড এবং শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যার মতো ঘরোয়া প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হলে আরও ভালো করা যেত। কিন্তু আমরা যদি বৈশ্বিক বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, অশান্তি ইত্যাদি বিবেচনা করি তবে আমরা আমাদের প্রতিযোগীদের থেকে ভালো করেছি,” যোগ করেন তিনি।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত আর্থিক নীতির পদক্ষেপে ভোক্তাদের ওপর প্রভাবের কারণে বেশিরভাগ অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো লড়াই করছে বলে প্রধান বাজারগুলোর আমদানি কমেছে।”
তিনি বলেন, “যেহেতু বিশ্বব্যাপী পোশাক বাণিজ্যের বৃদ্ধির ধারা সবসময় এক থাকে না। ফলে ২০২৩ বিশ্বব্যাপী এই শিল্পের জন্য একটি দুর্বল বছর হলেও আমরা বিশ্বাস করি ২০২৪ হবে পরিবর্তনের বছর।”
তিনি আরও বলেন, “সব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, শিল্পটি টেকসইতার দিকে তার প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। সবুজ শিল্পায়নের রূপান্তর আরও শক্তিশালী কর্মক্ষমতাসহ চলছে। শিল্প নির্গমন হ্রাসে দৃশ্যমান অগ্রগতি এসেছে।”
এছাড়া বাজার এবং পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি বৈচিত্র্যও চলছে। ২০২৪ সালে আরও কৌশলগত বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি ২০২৪ সাল এই খাতে তাজা বাতাসের শ্বাস নিয়ে আসবে। কারণ আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছি।”
তিনি সরকার, উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার আহ্বান জানান।