বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে বলা হয় ভর্তিযুদ্ধ। এটা যুক্তিসঙ্গত কারণে বলা যুক্তিসঙ্গত. কারণ লাখ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ঠিক যোদ্ধাদের মতো। যোদ্ধারা তাদের শরীরকে জয় করতে ব্যবহার করে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান অঙ্গ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। তাদের কষ্ট সেই যোদ্ধাদের চেয়ে অনেক বেশি। জ্ঞানের যোদ্ধাদের সাফল্য-ব্যর্থতা ময়দানে যোদ্ধাদের জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড়। বিভিন্ন কারণে একে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধের প্রথম শব্দ
আপনি একজন সচেতন জ্ঞান যোদ্ধা। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে এদেশে এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। মেধার সঠিক পরিচর্যা ও দক্ষতার আলোকে তখন উচ্চশিক্ষার পথও ভিন্ন। বিষয় ভিন্ন। প্রাচ্যের বিখ্যাত অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন আমার চোখে ভাসে। কিংবা অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উজ্জ্বল স্বপ্ন। হ্যাঁ! যদি আলাদিনের প্রদীপ পাওয়া যেত। তাহলে কতই না ভালো হতো।
এমন ভাবনা মাঝে মাঝে আসে। কেউ কেউ কল্পনায় দুঃসাহসিক সিনবাদের মতো হয়ে যায়। তারা কোন ইউনিটে কিভাবে চান্স পাবে তা নিয়ে কারো কারো মধ্যে আতঙ্ক বা ভয় রয়েছে। আসলে, এটি অস্বাভাবিক নয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফলতা পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। কোন নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই যার উপর আসন সংখ্যা সীমিত। তাই ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে হবে। এবং এর জন্য প্রথমে আপনার ভয়কে কবর দেওয়া উচিত। সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করুন। অন্যান্য জিনিস নোট করুন। সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
প্রথম জিনিস আপনি জানতে হবে
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি হয়। ভর্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য A ইউনিট, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের B ইউনিট এবং ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য C ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিটের এ ধরনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয় না। এ জন্য ভর্তির ফরম সংগ্রহের সময় বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষা পরিচালনা করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো বিষয়ভিত্তিক ভর্তিযুদ্ধ যাই হোক না কেন, সব পরীক্ষার ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি প্রায় একই রকম।
প্রস্তুতির জন্য আপনি কি অধ্যয়ন করবেন?
আপনি যদি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হন তবে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলি অধ্যয়ন করুন। এক্ষেত্রে শুধু এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী নয়, পুরো বইয়ে সব বিষয়ে মাস্টার্স করুন। এক্ষেত্রে জয়কলি পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বিচিত্রা সিরিজের বই দুটি খণ্ডে বিভক্ত। পার্ট ১ছোট সিলেবাস অনুযায়ী এবং পার্ট ২ পুরো সিলেবাসের বাকি অংশ।
আর আপনি যদি মানবিকের ছাত্র হন, তাহলে বাংলা-ইংরেজি, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান ভালোভাবে পড়ুন। আর বাণিজ্য শাখার ক্ষেত্রে সিলেবাসের বাইরে হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক নীতি ও প্রয়োগগুলো মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করুন। মনে রাখবেন যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট ভিত্তিক প্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোকে জিজ্ঞাসা করা হয়। সুতরাং সেভাবে আপনি আপনার নিজের মতো করে সামগ্রিক প্রস্তুতি নিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। প্রথমত, আপনার কাজ হল:
১) ইউনিট নির্বাচন করুন ২) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন ৩) নিয়মিত পড়ুন।
১. কেন ইউনিট নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিটের প্রস্তুতি আলাদা। একসঙ্গে একাধিক ইউনিট প্রস্তুত করা কঠিন হবে। প্রথমে আপনি যেকোনো একটি ইউনিট নির্বাচন করুন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নিন।
২. আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখুন।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে একটি বিশেষ রুটিন তৈরি করুন। সেরা সময় চয়ন করুন. কোন বিষয়ে কতদিন পড়বেন? সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান। . প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় খুব বেশি নয়। তাই খেয়াল রাখবেন এই সময়ে যেন নিয়মের পরিবর্তন না হয়।
৩. নিয়মিত পড়ুন।
জীবনের বাঁক বরাবর কত রকমের ঝামেলাই আসুক না কেন। আপনি বন্ধুদের কাছ থেকে যতই কল করুন না কেন আপনি আপনার রুটিনের বাইরে যাবেন না। প্রতিদিনের পড়া সম্পূর্ণ করুন। পড়ার বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ কালকে একটু একটু করার সময় ফুরিয়ে যাবে। তখন আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আরও কিছু উপায়
১) দৈনিক সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস করুন। কোনো বিনোদন বা ক্রীড়া পাতা নয়। আন্তর্জাতিক এবং ছাত্র নিয়োগ পৃষ্ঠা দেখুন. ‘মাসিক তোহতকণিকা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা আছে। সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে সংগ্রহ করতে পারেন, কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ।
২) অনুশীলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পড়ার সময় আগের পড়া ভুলে যাবেন না। পুরানো পড়াগুলিও সংশোধন করা উচিত। এটা নিয়মিত করলে আপনি হাফেজ সাহেবের মত পবিত্র কুরআনের পুরো কিতাব আয়ত্ত করতে পারবেন। তাই অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
৩) প্রবেশিকা পরীক্ষার আগে পরীক্ষা। সুযোগ বা সুযোগ থাকলে বারবার পরীক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন কোচিংয়ে বিগত বছরের প্রশ্ন বা পরীক্ষা দেওয়া উপযোগী। আপনি আপনার প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে বা কোনো বিষয়ে একটু বেশি দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন হলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এবং এটি আবার প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে।
৪) প্রশ্নটি বোঝা এবং উত্তর দেওয়া অন্যতম প্রধান কাজ। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা সহজ করা। একটু পিছন ফিরে আর কি! যার কারণে অনেকেই সহজ উত্তরে ভুল করে থাকেন। অতএব, আপনাকে প্রশ্নটি বুঝতে হবে এবং ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিতে হবে।