শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। সকলের প্রিয় এই ফুল শুধু চলনবিলেই নয়, যেকোনো ডোবা বা ড্রেনেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু হায়! প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য এখন আর চোখে পড়ে না। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ১৫-২০ বছর আগেও বড় বড় পুকুর ও বিলের বুক জুড়ে শাপলা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য ছিল দেখার মতো। তখন দীঘি আর বিলের বুকে শরতে প্রকৃতি অন্যরকম সাজে সাজতো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখা যেত চারিদিকে ফুটন্ত সাদা মোমবাতির মিছিল। মনে হচ্ছিল ফুলের পৃথিবী! শাপলা ফুল শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়ায় না এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এ ছাড়া এই ফুলের গাছপালা, শিকড় ও মাথা ফেলে দেওয়া যাবে না।
শাপলার নরম ডালপালা, মাথা ও গোড়ায় জন্মানো ড্যাপ ও শালুক সবই সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার। শাপলার গাছ বা ডালপালা পানির গভীরতায় পাঁচ থেকে ২০ ফুট লম্বা হয়। নুন ও তেঁতুল দিয়ে মুখরোচক সবজি হিসেবে এই নরম কচি ও কুঁচি খাওয়ার মজাই আলাদা। উপরন্তু, মাছ এবং মাংস রান্নার জন্য একটি চমৎকার তরকারি হিসাবে এর ডালপালা খুব জনপ্রিয়। শালুক পোড়া বা সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। দিনে ফিরে, শরতের শেষের দিকে, বন্যার পানি কমলেই শালুক ভেসে যায় বিলের ওপারে। পোড়া শালুকের গন্ধ আজও বড়দের মনে করিয়ে দেয় শৈশবের কথা। দিঘী বা বিলে শাপলা পদ্ম ফুটলে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁতরে এই ফুল নিয়ে আসত। শাপলাকে দুই ভাগে কেটে একজনের গলায় মালার মতো পরিয়ে দিত। এই রসাত্মক সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে মহাকাশের অতল গহ্বরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় অসময়ে বন্যা হচ্ছে। এছাড়া আবাদি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের কারণে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা সুপারি বা শুঁটির অনেক বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন শাপলার গাছ জন্মে না। শরৎকাল শেষ হলেও দেশে আগের মতো বড় পুকুর ও জলাশয় নেই। এই জলজ উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে শাপলার অস্তিত্ব কতটা টিকে থাকবে সেটাই এখন ভাবার বিষয়।
শাপলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। ওষুধে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন বিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কারণে শাপলা আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহাসিক কাল থেকেই শাপলা (ধাপ) ফল সুস্বাদু খই তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাটির নিচের প্রধান অংশকে শালুক বলে।
জাতীয় ফুল সাধারণত ঘেরা অগভীর জলাশয়, খাল-বিল ও গর্তে জন্মে। অনেক জায়গায় ফোঁটাগুলি চারিদিকে অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হত। পানিতে ভাসমান ফুল প্রায়ই গ্রামবাংলার সর্বত্র দেখা যেত। কিন্তু এখন অযত্ন ও অবহেলার কারণে জাতীয় ফুলটি বিলীন হওয়ার পথে। বিল, হ্রদ বা জলাশয়ে যখন সকালে বা চাঁদনী রাতে প্রচুর ফুল ফোটে তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
অনেকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, জলাশয় ও নিচু স্থানে পানি থাকলে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা জন্মে। দেশের তীরে, হ্রদ, খাল-বিল, নদী-নালা দখল, ভরাট, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারে দিন দিন শাপলাফুল বিলীন হয়ে যাচ্ছে।