প্রাণনাশের আশঙ্কায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে গোদাগাড়ী থানায় এ জিডি করা হয়।
জিডিতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার তার প্রাণনাশের পরিকল্পনা নিয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে দুই থেকে আড়াই হাজার ‘আওয়ামী চেতনাবিরোধী সন্ত্রাসী-দাঙ্গাবাজ লোক’ জড়ো হয়েছিল।
সদ্য নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বৃহস্পতিবার প্রথম তার কার্যালয়ে যান। সেদিন তার সঙ্গে কর্মী-সমর্থক ও অনুসারীরা গিয়েছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সমর্থন দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনি উপজেলা যুবলীগের কোষাধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন সোহেলের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলাল প্রথম অফিস করেন। সেদিন উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভাও হয়। এ সভায় যোগ দেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ওমর ফারুক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যান ওমর ফারুক চৌধুরী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম তাকে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলেন। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে সাংবাদিকদের দেখে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ‘এদিকে আসো, এদিকে আসো। সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আসো’ বলে কাছে ডাকেন।
এরপর তিনি বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কীসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হটাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি না, আই ডোন্ট নো। বাট, তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এইগুলোকে হটানোর জন্য।’
সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আসতে পারে না, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সাথে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।’ ওই সাংবাদিক তখন প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সঙ্গেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?’ এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রব্লেম হলো— তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তার জিডিতে বলেছেন, কয়েকজন সাংবাদিক তাকে অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাদের পেশাদার সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে, এক সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পর সাংবাদিকরা তাকে কোনো প্রশ্নই করেননি। বরং, এক সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিকর প্রশ্ন করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। তোপের মুখে পড়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
এর আগে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ’ করার সঙ্গে ইউএনওর সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে সংশয় প্রকাশ করেন। তখন তার পাশে ইউএনও দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘উনি যে কথাটা বলেছেন, সেটা পুলিশ তদন্ত করবে। যদি হত্যাচেষ্টার ঘটনা থাকে বা কারও ইনভলবমেন্ট থাকে, অবশ্যই এর বিচার হবে। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, দিয়ে দেবে। আমার যারা সিনিয়র আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, ‘তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে পারি যে, এমপি মহোদয় একটা জিডি করেছেন। আজ (শুক্রবার) বিজ্ঞ আদালতে জিডি তদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’