সৌরভ হত্যা: লাগেজের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
সৌরভ হত্যা: লাগেজের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার
ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভকে (২৪) হত্যার পর মরদেহ চার টুকরো করে একটি লাগেজে ভরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ সেই লাগেজের সূত্র ধরেই খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।

পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন,‌ ‘সৌরভকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুম করার চেষ্টা করে খুনিরা। সৌরকে হত্যার পর হ্যান্ড গ্লাভস পরে চাপাতি দিয়ে টুকরো করে লাগেজে ভরা হয়। মাথা আলাদা করে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়। সৌরভের পরিচয় যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য ইলিয়াস আলী সৌরভের হাতের আঙুল নষ্ট করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌরভের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের সময় আলামত হিসেবে লাগেজটি সংগ্রহ করা হয়। সেই লাগেজ কেনার সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘দেখা গেছে, আলামত হিসেবে পাওয়া লাগেজটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনাপাড় এলাকার কয়েকটি দোকানে গিয়ে এই ধরনের লাগেজ কারা বিক্রি করেন। সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে একটি শো-রুমের তথ্য পাওয়া যায়। পরে সেই শো-রুমের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ১ জুন শনিবার রাত ৮টার দিকে সৌরভের চাচা বা শ্বশুর ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এই লাগেজটি ক্রয় করেন। এই লাগেজের সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ গতকাল রাতে ফারুককে ঢাকা থেকে এবং ইলিয়াস আলীকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। সৌরভের দেহ বহনকারী প্রাইভেটকারসহ চালক আব্দুল হান্নানকেও (৬৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে এবং সৌরভকে হত্যা ও গুম করার চেষ্টার লোহমর্ষক বিবরণ দেন।’

ঘটনার বিবরণে আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ইলিয়াসের মেয়ে ইসরাত জাহান ইভা ও ওমর ফারুক সৌরভ চাচাতো ভাই- বোন। তিন বছর আগে কানাডায় অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইভাকে বাংলাদেশে রেখে তার স্বামী কানাডায় চলে যান। ইভা তখন তার চাচাতো ভাই ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। বিষয়টি উভয়ের পরিবার জানতো। গত ৯ মে ইভা ঢাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় সৌরভকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে মেনে নেননি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ বাবা ইভাকে কৌশলে ১৬ মে কানাডায় পাঠিয়ে দেন।

গত শনিবার (১ জুন) সৌরভ ইভার প্রথম স্বামীর বাবা চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহ আসেন। সৌরভ আমিনুল ইসলামের কাছে তার বিয়ের বিষয়টি খোলাসা করে সহযোগিতা চান। আমিনুল ইসলাম এই বিষয়টি ইলিয়াস আলীকে জানালে তিনি তার ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় ডাকেন।
সৌরভ বাসায় গেলে ইলিয়াস আলী (৫৫) ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) প্রথমেই তাকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর চাপাতি দিয়ে চার খণ্ড করেন দেহ। পরে গাঙ্গিনারপাড় থেকে একটি নতুন লাগেজ কিনে সেই লাগেজে খণ্ডিত দেহ ভরে নদীতে ফেলে দেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২ জুন) ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে ওমর ফারুক সৌরভের চার খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বিকেলে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। ঘটনার পরপরেই গাঁ ঢাকা দেন ইলিয়াস আলী ও তার পুরো পরিবার। ওই ঘটনায় নিহত সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী রোববার রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। গতকাল সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের তারাটি গ্রামে সৌরভের দাফন সম্পন্ন হয়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সৌরভ হত্যা: লাগেজের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার

সৌরভ হত্যা: লাগেজের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার
ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভকে (২৪) হত্যার পর মরদেহ চার টুকরো করে একটি লাগেজে ভরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ সেই লাগেজের সূত্র ধরেই খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।

পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন,‌ ‘সৌরভকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুম করার চেষ্টা করে খুনিরা। সৌরকে হত্যার পর হ্যান্ড গ্লাভস পরে চাপাতি দিয়ে টুকরো করে লাগেজে ভরা হয়। মাথা আলাদা করে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়। সৌরভের পরিচয় যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য ইলিয়াস আলী সৌরভের হাতের আঙুল নষ্ট করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌরভের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের সময় আলামত হিসেবে লাগেজটি সংগ্রহ করা হয়। সেই লাগেজ কেনার সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘দেখা গেছে, আলামত হিসেবে পাওয়া লাগেজটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনাপাড় এলাকার কয়েকটি দোকানে গিয়ে এই ধরনের লাগেজ কারা বিক্রি করেন। সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে একটি শো-রুমের তথ্য পাওয়া যায়। পরে সেই শো-রুমের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ১ জুন শনিবার রাত ৮টার দিকে সৌরভের চাচা বা শ্বশুর ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এই লাগেজটি ক্রয় করেন। এই লাগেজের সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ গতকাল রাতে ফারুককে ঢাকা থেকে এবং ইলিয়াস আলীকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। সৌরভের দেহ বহনকারী প্রাইভেটকারসহ চালক আব্দুল হান্নানকেও (৬৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে এবং সৌরভকে হত্যা ও গুম করার চেষ্টার লোহমর্ষক বিবরণ দেন।’

ঘটনার বিবরণে আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ইলিয়াসের মেয়ে ইসরাত জাহান ইভা ও ওমর ফারুক সৌরভ চাচাতো ভাই- বোন। তিন বছর আগে কানাডায় অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইভাকে বাংলাদেশে রেখে তার স্বামী কানাডায় চলে যান। ইভা তখন তার চাচাতো ভাই ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। বিষয়টি উভয়ের পরিবার জানতো। গত ৯ মে ইভা ঢাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় সৌরভকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে মেনে নেননি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ বাবা ইভাকে কৌশলে ১৬ মে কানাডায় পাঠিয়ে দেন।

গত শনিবার (১ জুন) সৌরভ ইভার প্রথম স্বামীর বাবা চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহ আসেন। সৌরভ আমিনুল ইসলামের কাছে তার বিয়ের বিষয়টি খোলাসা করে সহযোগিতা চান। আমিনুল ইসলাম এই বিষয়টি ইলিয়াস আলীকে জানালে তিনি তার ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় ডাকেন।
সৌরভ বাসায় গেলে ইলিয়াস আলী (৫৫) ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) প্রথমেই তাকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর চাপাতি দিয়ে চার খণ্ড করেন দেহ। পরে গাঙ্গিনারপাড় থেকে একটি নতুন লাগেজ কিনে সেই লাগেজে খণ্ডিত দেহ ভরে নদীতে ফেলে দেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২ জুন) ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে ওমর ফারুক সৌরভের চার খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বিকেলে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। ঘটনার পরপরেই গাঁ ঢাকা দেন ইলিয়াস আলী ও তার পুরো পরিবার। ওই ঘটনায় নিহত সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী রোববার রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। গতকাল সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের তারাটি গ্রামে সৌরভের দাফন সম্পন্ন হয়।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত