রামমন্দির নির্মাণ করেও যে কারণে অযোধ্যায় হারলো বিজেপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
রামমন্দির নির্মাণ করেও যে কারণে অযোধ্যায় হারলো বিজেপি
ছবি: সংগৃহীত

অযোধ্যায় রামমন্দির নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ভারতজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, রামমন্দিরের বদৌলতে অযোধ্যায় বিরোধীদের একেবারেই হটিয়ে দেবেন নির্বাচনে। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে তার বিপরীত চিত্রটিই উঠে এসেছে। রামরাজ্যে রীতিমতো ধরাশায়ী হয়েছে রামভক্ত বিজেপি ও মোদি। কিন্তু কেন?

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি যথাক্রমে ৭১ এবং ৬২টি আসন পেয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে স্রেফ ৩৩টি আসন। ভোটের মাস তিনেক আগে ২২ জানুয়ারি অসমাপ্ত রামমন্দির তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই উদ্বোধন নিয়ে মেতেওছিলেন রামভক্তরা। প্রকাশ্যে না বললেও বিজেপির এই সিদ্ধান্ত যে ভোট টানার জন্যই, তা নিয়ে দ্বিমত ছিল না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার ফল তো মেলেইনি, উল্টো অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের অধীন, সেই ফৈজাবাদেই ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। এই আসনে সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ ৫৪ হাজার ৫৬৭ ভোটে পরাজিত করেছেন বিজেপির লালু সিংকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ ও তার ক্ষতিপূরণকে দায়ী করা হচ্ছে। রামমন্দির নির্মাণ করতে গিয়ে বহু মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অনেকে ক্ষতিপূরণও পাননি বলে দাবি করা হয়। নির্বাচনের ফলাফলে এর অসন্তোষ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

বিজেপির পরাজয়ের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, রামমন্দির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারে অযোধ্যাধামের উন্নয়ন কাজের কথা বলা হলেও অযোধ্যার গ্রামীণ এলাকায় তেমন নজর দেওয়া হয়নি। এখানে গ্রামাঞ্চলের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মনে করা হচ্ছে, এই ক্ষোভের জেরে গ্রামবাসীরা বিজেপির পক্ষে ভোট দেয়নি।

বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশজয়ী সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, খাস অযোধ্যার লোকসভা কেন্দ্রেই কেন বিজেপির ভরাডুবি হল?

জবাবে যাদব বলেছেন, ‘বিজেপি অযোধ্যায় সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। দেবতার পুজা করতে গিয়ে দরিদ্রদের পথে বসিয়েছে। তারই ফল এসেছে ভোট বাক্সে। বরং আমি বলব, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও কমার কথা ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘অযোধ্যায় রাম মন্দির করার জন্য বহু মানুষকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করেছে বিজেপি। বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনও হয়েছে, ১০০ বছর ধরে অযোধ্যার ওই এলাকার বাসিন্দাকে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। তারাই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।’

অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয়ের আরও দুটি কারণ অনুমান করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, সাধারণ আসন হওয়া সত্ত্বেও ফৈজাবাদে সমাজবাদী পার্টি তাদের সবচেয়ে বড় মুখ অবধেশ প্রসাদকে দলিত পাসি সম্প্রদায় থেকে মনোনীত করেছিল। যার পরে এখানে স্লোগান শুরু হয়েছিল – ‘অযোধ্যায় মথুরা নয় কাশী, কেবল অবধেশ পাসি।’ এ ছাড়া বিজেপির ভোটব্যাংক ভাগাভাগি করতেও সফল হয়েছে সমাজবাদী-কংগ্রেস জোট। এই আসনে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম ভোটার রয়েছে, তারাও ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে ছিল।

ফৈজাবাদে বিজেপির পরাজয়ের আরেকটি কারণ ছিল দলটির প্রার্থী লালু সিংয়ের বক্তব্য। লালু সিং বলেছিলেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে বিজেপির ৪০০ আসন দরকার। সম্ভবত ফৈজাবাদের ২৬ শতাংশ দলিত এটা পছন্দ করেননি। বিজেপি লালু সিংয়ের বক্তব্যের কারণে ক্ষতি বন্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল কিন্তু ফলাফল দেখায় যে তা ব্যর্থ হয়েছে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রামমন্দির নির্মাণ করেও যে কারণে অযোধ্যায় হারলো বিজেপি

রামমন্দির নির্মাণ করেও যে কারণে অযোধ্যায় হারলো বিজেপি
ছবি: সংগৃহীত

অযোধ্যায় রামমন্দির নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ভারতজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, রামমন্দিরের বদৌলতে অযোধ্যায় বিরোধীদের একেবারেই হটিয়ে দেবেন নির্বাচনে। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে তার বিপরীত চিত্রটিই উঠে এসেছে। রামরাজ্যে রীতিমতো ধরাশায়ী হয়েছে রামভক্ত বিজেপি ও মোদি। কিন্তু কেন?

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি যথাক্রমে ৭১ এবং ৬২টি আসন পেয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে স্রেফ ৩৩টি আসন। ভোটের মাস তিনেক আগে ২২ জানুয়ারি অসমাপ্ত রামমন্দির তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই উদ্বোধন নিয়ে মেতেওছিলেন রামভক্তরা। প্রকাশ্যে না বললেও বিজেপির এই সিদ্ধান্ত যে ভোট টানার জন্যই, তা নিয়ে দ্বিমত ছিল না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার ফল তো মেলেইনি, উল্টো অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের অধীন, সেই ফৈজাবাদেই ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। এই আসনে সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ ৫৪ হাজার ৫৬৭ ভোটে পরাজিত করেছেন বিজেপির লালু সিংকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ ও তার ক্ষতিপূরণকে দায়ী করা হচ্ছে। রামমন্দির নির্মাণ করতে গিয়ে বহু মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অনেকে ক্ষতিপূরণও পাননি বলে দাবি করা হয়। নির্বাচনের ফলাফলে এর অসন্তোষ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

বিজেপির পরাজয়ের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, রামমন্দির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারে অযোধ্যাধামের উন্নয়ন কাজের কথা বলা হলেও অযোধ্যার গ্রামীণ এলাকায় তেমন নজর দেওয়া হয়নি। এখানে গ্রামাঞ্চলের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মনে করা হচ্ছে, এই ক্ষোভের জেরে গ্রামবাসীরা বিজেপির পক্ষে ভোট দেয়নি।

বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশজয়ী সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, খাস অযোধ্যার লোকসভা কেন্দ্রেই কেন বিজেপির ভরাডুবি হল?

জবাবে যাদব বলেছেন, ‘বিজেপি অযোধ্যায় সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। দেবতার পুজা করতে গিয়ে দরিদ্রদের পথে বসিয়েছে। তারই ফল এসেছে ভোট বাক্সে। বরং আমি বলব, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও কমার কথা ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘অযোধ্যায় রাম মন্দির করার জন্য বহু মানুষকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করেছে বিজেপি। বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনও হয়েছে, ১০০ বছর ধরে অযোধ্যার ওই এলাকার বাসিন্দাকে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। তারাই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।’

অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয়ের আরও দুটি কারণ অনুমান করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, সাধারণ আসন হওয়া সত্ত্বেও ফৈজাবাদে সমাজবাদী পার্টি তাদের সবচেয়ে বড় মুখ অবধেশ প্রসাদকে দলিত পাসি সম্প্রদায় থেকে মনোনীত করেছিল। যার পরে এখানে স্লোগান শুরু হয়েছিল – ‘অযোধ্যায় মথুরা নয় কাশী, কেবল অবধেশ পাসি।’ এ ছাড়া বিজেপির ভোটব্যাংক ভাগাভাগি করতেও সফল হয়েছে সমাজবাদী-কংগ্রেস জোট। এই আসনে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম ভোটার রয়েছে, তারাও ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে ছিল।

ফৈজাবাদে বিজেপির পরাজয়ের আরেকটি কারণ ছিল দলটির প্রার্থী লালু সিংয়ের বক্তব্য। লালু সিং বলেছিলেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে বিজেপির ৪০০ আসন দরকার। সম্ভবত ফৈজাবাদের ২৬ শতাংশ দলিত এটা পছন্দ করেননি। বিজেপি লালু সিংয়ের বক্তব্যের কারণে ক্ষতি বন্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল কিন্তু ফলাফল দেখায় যে তা ব্যর্থ হয়েছে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত