দীর্ঘ আট দিন পরও অভিনেত্রী কলেজছাত্রী সোনিয়া (২১) হত্যা মামলার কূলকিনার মিলছে না। গ্রেফতার হওয়া সোনিয়ার মামাতো ভাই সজীবও মুখ খুলছেন না। নগরীতে নিজ শয়নকক্ষে ওই তরুণী খুন হন। পুলিশ সজীবকে রিমান্ডে নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি।
জানা গেছে, প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নিলেও সজীব মুখ খোলেননি। সূত্র মতে, প্রথম দফা রিমান্ডে নেওয়ার পর পুলিশের কাছে সজীব স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু শনিবার তাকে আদালতে তুললে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। এ কারণে তাকে আরো দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আজ সোমবার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষ হবে এবং তাকে ফের আদালতে তোলা হবে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সিলেট মহানগরের শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার শীতলজুড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ঐ বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সোনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় করতেন।
সজীব হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের আগে সোনিয়াদের বাসায় রাতযাপন করেন তিনি। ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়ার অসুস্থতার কারণে তাকে নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে চলে যান। পরে দুপুর ১২টার বাসায় ফিরে সোনিয়ার শয়নকক্ষে গিয়ে তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকে সজীব গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহ গড়ায় তার দিকেই। সোনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও খোয়া গেছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। শুরু থেকেই সোনিয়ার পরিবারের সদস্যদের দাবি ছিল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সজীব জড়িত। পুলিশও এমন সন্দেহ করছে। নগর জুড়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব প্রযুক্তির সহায়তায় সজীবের অবস্থান শনাক্ত করে এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, প্রায়ই সোনিয়াদের বাসায় আসতেন সজীব। খুনের ঘটনার আগে তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে সাত দিন যাবত সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজীবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ঐদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট শহরের শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন। সোনিয়ার মরদেহের গলার বাম পাশে গভীর এবং ডান হাতের কবজির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এ সময় সোনিয়ার লাশের পাশ থেকে ধারালো রক্তমাখা কাঁচি উদ্ধার করে। রিমান্ডের প্রথম দিন সজীবকে নিয়ে সোনিয়াদের বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে বালতিতে রাখা রক্তমাখা জামা উদ্ধার করে। জামায় দুই জনেরই রক্ত আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য পুলিশ জামা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছে।