যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়ার বুকভরা বাঁওড়ের জমি দখলে নিয়ে নির্মাণ করা বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। রোববার চাঁন্দুটিয়া গ্রামের শ’শ’ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে ওই বাঁধ অপসারণ করে। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি জমি দখলে নিয়ে অবৈধ বাঁধ দেয়ার কারণে চাষিরা হতাশায় ছিলেন। বাঁধে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টির কারণে ৫০০ বিঘা আবাদী জমিতে জলাবদ্ধতার আশংকায় ভুগছিলেন তারা। চাষিদের সুবিধার্থে ওই বাধ অপসারণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, বুকভরা বাঁওড়ের চান্দুটিয়া অংশের বিঘা বিঘা সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বাঁধ দিয়েছে মঠবাড়ি গ্রামের পরিতোষ সরকারের ছেলে রিপন সরকার। বাঁওড়ের সাথে পূর্ব মাঠের সংযোগ কালভার্টের মুখে বাঁধ দেয়ার কারণে পাশে ৫০০ বিঘা আবাদী জমির মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েন। রিপন সরকারের দেখাদেখি চান্দুটিয়া গ্রামের মৃত মকসেদ খাঁর ছেলে নুর ইসলাম, মৃত কাওসার খাঁর ছেলে নূর জামাল, মৃত নিবার আলী বিশ্বাসের ছেলে নজরুল বিশ্বাস, মৃত দুখি বিশ্বাসের ছেলে শফিয়ার বিশ্বাসও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
এমন দুঃসময়ে চাষিদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় মেম্বর শিপন আহমেদসহ গ্রামের শ’শ’ মানুষ। অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে তারা সোচ্চার হন। জোটবদ্ধভাবে বাঁওড় পাড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। এরপরেও জবরদখলকারীরা অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করার জন্য প্রভাবশালী মহলে দেনদরবার শুরু করে। তারা প্রভাব খাটিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার মরিয়া হয়। যা মেনে নিতে পারেনি গ্রামের শ’শ’ মানুষ। তারা রোববার জোটবদ্ধভাবে বাঁওড় পাড়ে অবস্থান নিয়ে অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে।
চান্দুটিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিন্টু হোসেন জানান, চাষিদের সুবিধার্থে গ্রামবাসী তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। একটি কুচক্রি মহল নিজেদের সুবিধার্থে বাঁওড়ে অবৈধ বাঁধ তৈরি করেছিলো। গ্রামবাসী জোটবদ্ধ হয়ে ওই বাঁধ অপসারণ করেছে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম জানান, একটি প্রভাবশালী চক্র ঐহিত্যবাহী বুকভরা বাঁওড় ক্রমেই গিলে খাচ্ছে। এতে দখলকারীরা লাভবান হলেও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বুকভরা বাঁওড় দখল করে বাঁধ দেয়া চলবে না। গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রতিবাদ করা হবে।
১ নম্বর মেম্বর শিপন আহমেদ জানান, বুকভরা বাঁওড়ের অনেক পরিচিতি রয়েছে। অথচ সেই বাঁওড়ের অস্তিত্ব বিলীন করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি চেষ্টা অব্যাহত আছে। তারা বাঁওড়ের বিঘা বিঘা জমি অবৈধভাবে ভোগদখলে রেখেছে। এখন আবার সেখানে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের পায়তারা করছে। বাঁওড়ে প্রভাবশালীদের বাঁধের কারণে ৫০০ বিঘা আবাদী জমির মালিক হতাশ ছিলেন। কেননা সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। জমির মালিক ও গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে অবৈধ বাঁধ গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী এখন সোচ্চার। জীবন গেলেও তারা বাঁওড়ে বাঁধ দিতে দেবে না।
দেয়াড়া মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে বাঁওড়ের বাধ অপসারণের বিষয়ে তিনি গ্রামবাসীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ভূমিহীন সেজে যারা সরকারি জমি ভোগদখল করছে তাদের সকলকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করার বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।