সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের উপসর্গ হিসাবে দেখা দিয়েছে কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি। দেশের নগর-শহর, জেলা-উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ অপসংস্কৃতির বিস্তার ইতোমধ্যে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়ও চুরি-ছিনতাই ও খুনসহ বেড়েছে নানা অপরাধ। এসব ঘটনার পেছনে বেশিরভাগই জড়িত রয়েছে কিশোর গ্যাং। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রায় সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোররা। তাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে ‘গডফাদাররা’। এসব অপরাধ দমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।
২০১৮ সালে পর্যটন শহর কক্সবাজারে অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলির ৪০ স্থানে ৫২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। এসব সিসি ক্যমেরা ফাঁকি দিয়েও চলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
দিন যত যাচ্ছে ততই ভয়ংকর উঠছে কিশোর গ্যাং। দিনে-দুপুরে তারা ছিনতাই করছে। কথায় কথায় মারামারি ও অস্ত্রবাজি করছে। খুন করতে দ্বিধাবোধ করছে না।
সর্বশেষ শনিবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের রামুতে ৪ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত ও বেধড়ক পিটিয়ে আড়াই লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে সংঘবদ্ধ একটি কিশোর গ্যাং চক্রের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার বিষয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘আসলে রামুতে সে রকম কোনো কিশোর অপরাধী চক্র গড়ে ওঠেনি। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো কেউ অপরাধে জড়াতে পারে। কিশোর গ্যাং থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে গত ১৬ মে অত্যাধুনিক চাকু ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফিল্মী স্টাইলে আক্রমণ করে হাসান নামের এক শিক্ষার্থীর পেটে ছুরিকাঘাত করে একটি কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যাচেষ্টা মামকনক বড়ুয়াকনক বড়ুয়ালা করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলো, কক্সবাজার পৌরসভার ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা সজলের ছেলে উজ্জ্বল (১৮), একই এলাকার প্রবীর বিশ্বাসের ছেলে অনুভব বিশ্বাস (১৭) ও দিলীপ দে’র ছেলে দেবজিত দে (১৭)।
২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত শহরের অপরাধ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখানে অপরাধের মাত্রা ও ধরন পাল্টাচ্ছে দিনদিন। মাদক সেবন ও পাচারকে কেন্দ্র করে কিশোর ও তরুণরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে শহরে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে সাত গুণ। সম্প্রতি দেশের প্রধান এই পর্যটন শহরে চুরি-ছিনতাই, খুন ও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
গত ৩ মে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, ‘অপরাধ যে বা যারাই করুক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার স্বাভাবিক গতি কেউ ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার অপরাধ দমনে পুলিশের কয়েকটি বিশেষ টিম কাজ করছে। মাদক পাচাররোধ ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতসহ নানা ধরনের অপরাধ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তবে সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি আমরা।’