নেত্রকোণায় ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা, বেড়েছে কিশোর অপরাধ

আব্দুর রহমান ঈশান জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোণা
নেত্রকোণায় ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা, বেড়েছে কিশোর অপরাধ

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সারাদেশের ন্যায় সম্প্রতি নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শন, শো-ডাউনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড সাথে চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকার কুরপাড়, সাতপাই, নাগড়া, জয়নগর সহ বেশ কিছু এলাকায় উঠতি বয়সের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে আছে এই গ্যাং কালচারে। এলাকার বিভিন্ন চা-দোকানের ভেতর কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার রাস্তায় দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয় তারা। এমন কি বিভিন্ন সময় অভিভাবকদেরও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের উৎপাতের ভয়ে কেউ কারও কাছে মুখ খুলতে সাহস পায় না। শুধু এসব এলাকাতেই না, এমন চিত্র দেখা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও।

অস্ত্র হাতে ভিডিও নিয়ে টিকটক করা, আধিপত্য বিস্তারের জন্য শোডাউন দিয়ে এসব ভিডিও ছাড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকার কিশোরদের নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে তারা এই সব অপরাধচক্র। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের দলে যোগদান করিয়ে সংঘটিত হয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নিজেদের গ্যাং কালচারের মাধ্যমে আধিপত্য দেখায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা।

প্রায়ই ঠিকঠাক মতো তাদের ম্যানার না মানলে, তাদের সামনে সিগারেট খাওয়াসহ কোন ভুল করলে বিভিন্ন গ্যাং এর ছেলেদের কাছে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অনেক সাধারণ মানুষকে। অন্য এলাকা থেকে অপরিচিত কেউ ঘুরতে আসলে তাদের কৌশলে আটকে রেখে মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ জিনিসপত্র রেখে দেয় তারা। এছাড়াও এই গ্রুপ গুলোর নেতৃত্বে সন্ধ্যায় হলে কিংবা বিভিন্ন নামীদামী স্কুল বা কলেজ বসে মাদকের আসর।

এলাকার বন্ধুরা মিলে একসাথে গাঁজা সেবন,এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে যুক্ত তারা। স্কুল পড়ুয়া উঠতি বয়সের কিশোরদের নিয়ে পরিবারের অজান্তেই মাদকসহ নানা অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত করায় পৌর শহরে সচল থাকা বেশ কিছু কিশোর গ্যাং।

সম্প্রতি পৌর শহরের বেশ কিছু স্থানে এই কিশোর গ্যাং এর এক পক্ষের সাথে আরেক পক্ষের ধাওয়া পালটা ধাওয়া,ছোট খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং দ্বন্দ্বের জেড়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ এধরণের নানা কার্যক্রমে ভীত হয়ে আছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও জেলার বাহিরে বিভিন্ন উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন কিশোর গ্যাং এর বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। নেতাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতি উপজেলায় রয়েছে এক বা একাধিক গ্রুপ।

গত বছর জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাগুলি গ্রামে দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে মারামারীর ঘটনায় সুমন মিয়া (১৬) নামের একজন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরও চারজন। নিহত সুমন কেন্দুয়া উপজেলার চিথোলিয়া গ্রামের মৃত ইনচান মিয়ার ছেলে।

আহতরা হচ্ছে- রিফাত আকন্দ, সালাউদ্দিন বিজয়, হাসান ও রেদোয়ান হাসান রিয়াদ। এরা চিথোলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। কেন্দুয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, সাগুলি গ্রামে সাধক হাসান শাহর মাজারের ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওই ওরসে চিথোলিয়া গ্রামের দু’দল কিশোর গ্রুপবের মধ্যে মারামারীর ঘটনা ঘটে। এ সময় ছুরিকাঘাতে উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হয় ও একজন নিহত হন।

এ বছরের মে মাসে নেত্রকোনার বারহাট্টায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মণকে (১৬) কুপিয়ে হত্যায় জড়িত মো. কাওসার মিয়াক (১৭) কে আটক করেছে পুলিশ। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রানীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয় কাওসার। এর পরেই তাকেই কুপিয়ে হত্যা করে।

জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। এসব কিশোরদের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এ সকল অপরাধীরা। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে না কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাদের উচিত শিশু-কিশোরদের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখার জন্য কর্মসূচি তৈরি করা।

পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নেত্রকোণায় ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা, বেড়েছে কিশোর অপরাধ

নেত্রকোণায় ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা, বেড়েছে কিশোর অপরাধ

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা ‘গ্যাং’ বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত ‘বড় ভাইদের’ আস্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সারাদেশের ন্যায় সম্প্রতি নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শন, শো-ডাউনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড সাথে চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকার কুরপাড়, সাতপাই, নাগড়া, জয়নগর সহ বেশ কিছু এলাকায় উঠতি বয়সের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে আছে এই গ্যাং কালচারে। এলাকার বিভিন্ন চা-দোকানের ভেতর কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার রাস্তায় দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেয় তারা। এমন কি বিভিন্ন সময় অভিভাবকদেরও নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের উৎপাতের ভয়ে কেউ কারও কাছে মুখ খুলতে সাহস পায় না। শুধু এসব এলাকাতেই না, এমন চিত্র দেখা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও।

অস্ত্র হাতে ভিডিও নিয়ে টিকটক করা, আধিপত্য বিস্তারের জন্য শোডাউন দিয়ে এসব ভিডিও ছাড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকার কিশোরদের নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে তারা এই সব অপরাধচক্র। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের দলে যোগদান করিয়ে সংঘটিত হয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নিজেদের গ্যাং কালচারের মাধ্যমে আধিপত্য দেখায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা।

প্রায়ই ঠিকঠাক মতো তাদের ম্যানার না মানলে, তাদের সামনে সিগারেট খাওয়াসহ কোন ভুল করলে বিভিন্ন গ্যাং এর ছেলেদের কাছে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অনেক সাধারণ মানুষকে। অন্য এলাকা থেকে অপরিচিত কেউ ঘুরতে আসলে তাদের কৌশলে আটকে রেখে মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ জিনিসপত্র রেখে দেয় তারা। এছাড়াও এই গ্রুপ গুলোর নেতৃত্বে সন্ধ্যায় হলে কিংবা বিভিন্ন নামীদামী স্কুল বা কলেজ বসে মাদকের আসর।

এলাকার বন্ধুরা মিলে একসাথে গাঁজা সেবন,এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে যুক্ত তারা। স্কুল পড়ুয়া উঠতি বয়সের কিশোরদের নিয়ে পরিবারের অজান্তেই মাদকসহ নানা অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত করায় পৌর শহরে সচল থাকা বেশ কিছু কিশোর গ্যাং।

সম্প্রতি পৌর শহরের বেশ কিছু স্থানে এই কিশোর গ্যাং এর এক পক্ষের সাথে আরেক পক্ষের ধাওয়া পালটা ধাওয়া,ছোট খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং দ্বন্দ্বের জেড়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ এধরণের নানা কার্যক্রমে ভীত হয়ে আছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও জেলার বাহিরে বিভিন্ন উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন কিশোর গ্যাং এর বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। নেতাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতি উপজেলায় রয়েছে এক বা একাধিক গ্রুপ।

গত বছর জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাগুলি গ্রামে দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে মারামারীর ঘটনায় সুমন মিয়া (১৬) নামের একজন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরও চারজন। নিহত সুমন কেন্দুয়া উপজেলার চিথোলিয়া গ্রামের মৃত ইনচান মিয়ার ছেলে।

আহতরা হচ্ছে- রিফাত আকন্দ, সালাউদ্দিন বিজয়, হাসান ও রেদোয়ান হাসান রিয়াদ। এরা চিথোলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। কেন্দুয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, সাগুলি গ্রামে সাধক হাসান শাহর মাজারের ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওই ওরসে চিথোলিয়া গ্রামের দু’দল কিশোর গ্রুপবের মধ্যে মারামারীর ঘটনা ঘটে। এ সময় ছুরিকাঘাতে উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হয় ও একজন নিহত হন।

এ বছরের মে মাসে নেত্রকোনার বারহাট্টায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মণকে (১৬) কুপিয়ে হত্যায় জড়িত মো. কাওসার মিয়াক (১৭) কে আটক করেছে পুলিশ। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রানীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয় কাওসার। এর পরেই তাকেই কুপিয়ে হত্যা করে।

জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। এসব কিশোরদের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এ সকল অপরাধীরা। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে না কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাদের উচিত শিশু-কিশোরদের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখার জন্য কর্মসূচি তৈরি করা।

পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত