যশোরের বাজার থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে আমদানির কাঁচা মরিচ খুব বেশি চোখে পড়েনি। যেগুলো আছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর আগে সোমবার প্রতি কেজির দাম ছিলো ২৪০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১৬০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সংকট তৈরি করে ৫৫ টাকা কেজি দরে আমদানি করা কাঁচা মরিচ এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে আমদানি করা কাঁচা মরিচ যাচ্ছে কোথায় সেদিকে প্রশাসনের নজর দেয়ার দাবি ক্রেতাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বাজারে আমদানির কাঁচা মরিচ নেই। কিছু খুচরা বিক্রেতা ৪/৫ কেজি নিয়ে বসে আসেন। পাইকার বাজারে সংকট থাকার কারণে খুচরা বিক্রেতারা বেশি করে কিনতে পারছেন না। মঙ্গলবার যশোর শহরের বড় বাজারে কাঁচা মরিচ খুচরা বিক্রি করা হয়েছে ১০০ টাকা পোয়া। অর্থাৎ ৪০০ টাকা কেজি। তবে সোমবার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিলো ২৪০ টাকায়। বাজারে আমদানি করা মরিচ তেমন একটা না থাকায় একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুন দাম বেড়ে গেছে।
সবজি বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, আমদানির কাঁচা মরিচ সোমবার পাইকার দাম ছিলো ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে তারা বিক্রি করেছিলেন ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার বাজারে সংকট থাকার কারণে পাইকারী দাম ছিলো ৩৩০ টাকা কেজি। বেশি দামে কেনার কারণে তারা বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা।
চুড়ামনকাটি বাজারের সবজি বিক্রেতা শুকুর আলী জানান, পাইকারী বাজারে পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচ নেই। ট্রচুর চাহিদা থাকায় ইতিমধ্যে আমদানির কাঁচা মরিচ সংকট দেখা দিয়েছে। আবার স্থানীয় কৃষকরা ফলনের অভাবে ৫/৬ কেজি করে কাঁচা মরিচ বাজারে আনছেন। যা দিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ফলে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। তবে আমদানির কাঁচা মরিচ সঠিকভাবে বাজারজাত হলে সংকট অনেকটা কমে যাবে।
সবজি বিক্রেতা শামীম হোসেন জানান, কাঁচা মরিচ ভারত থেকে আমদানির খবরে দাম কিছুটা কমেছিলো। তবে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আবারও দাম বাড়ছে।
শামসুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কাঁচা মরিচের আবারও দাম বাড়ছে। বাজারে বিদ্যমান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। তার প্রশ্ন এতো পরিমানে আমদানি করা কাঁচা মরিচ দুই দিনে শেষ হয়ে গেলো? শামসুর রহমানের দাবি, ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে বাজারে আমদানির কাঁচা মরিচের সংকট তৈরি করেছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। প্রশাসনের সঠিকভাবে জবাবদিহিতা ও তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করলে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টানা সম্ভব হবে। যশোর শহরের বড় বাজারের নিউ মা ভান্ডারের মালিক (আড়ৎদার) উত্তম জানান, তারা খুব বেশি আমদানির কাঁচা মরিচ পাননি। মঙ্গলবার তিনি মাত্র ২০০ কেজি পেয়েছেন। বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে বাঁধ্য হয়েছেন।
চুড়ামনকাটির বাজারের আড়ৎদার সিরাজুল ইসলাম জানান, যশোর ও খুলনা থেকে কিছু আমদানির কাঁচা মরিচ কিনেছিলেন। সোমবার যে দামে কিনেছিলেন মঙ্গলবার কিনেছেন তার দ্বিগুণ দামে। তিনি জানান, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির পরিমান যত বাড়বে তত দাম কমে যাবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবীব জানান, যশোরের বাজারে আমদানি করা কাঁচা মরিচের তেমন দেখা মিলছে না বলে তার কাছে তথ্য এসেছে। বুধবার বাজার মনিটরিংয়ে যাবেন। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে কাঁচা মরিচ সংকটের প্রমান মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন ধরে কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতা চলে আসছিলো। ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ৩৬ হাজারের বেশি টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এক সপ্তাহে ৯৩ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।