সিন্ডিকেটের প্রভাবে পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা। এতে করে পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, পাটের এমন বাজার দর অব্যাহত থাকলে আগামী বছর থেকে আর পাট চাষ করবেন না।
মাগুরার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে, প্রতিমণ পাট ১,৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাতে করে খরচ উঠছে না চাষিদের।
শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়ায় প্রতি শনিবার ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটচাষিরা পাট বিক্রি করতে আসেন। তবে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে অনেকেই পাট ফিরিয়ে নিচ্ছেন বাড়িতে। অনেকে আবার অর্থের প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন।
প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় উৎসাহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনরা কমমূল্য দিচ্ছে, তাই আমরাও কমমূল্যে ক্রয় করছি।
আড়পাডা ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের পাটচাষি অছিউদ্দিন মোল্যা বলেন, “এ বছর দুই একর জমিতে পাট বুনেছি। পাট বুনা থেকে শুরু করে ধোয়া ও শুকানো পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, মণপ্রতি ২,৫০০ টাকা দরে বিক্রি করলে সেই খরচ উঠবে।”
বরইচারা গ্রামের পাটচাষি উৎপল বিশ্বাস বলেন, “এভাবে পাটের দাম কমে যাবে আগে জানলে পাট বুনতাম না। প্রতি হাটে পাটের দাম মণপ্রতি ২০০ টাকা কমে যাচ্ছে।
পাটের দাম কম থাকায় পাট হয়ে উঠেছে কৃষকের গলার কাঁটা। না পারছেন ফেলতে, না পারছেন ভালো দামে বিক্রি করতে। ফলে অনেকেই আগামী বছর পাটচাষ থেকে বিরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন পাট ব্যবসায়ীরা। পাটের রং ও মান ভালো না হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
পাট ব্যবসায়ী খোকন সাহা বলেন, “মহাজনদের কাছে কম মূল্য বিক্রি করতে হচ্ছে তাই আমরাও কমমূল্যে ক্রয় করছি।”
অপর এক পাটব্যবসায়ী হাসিবুল কাজী বলেন, “আমরা সাধারণত খুলনা, কুষ্টিয়াসহ যেসব এলাকায় পাট বিক্রি করি সেখানে পাটের মূল্য কম থাকায় আমরাও কম মূল্যে ক্রয় করছি।”
শালিখা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৩,৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি। যেখানে ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৫ বেল। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, “পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাটচাষিরা ভালোভাবে পাট জাগ দিতে পারেননি। ফলে পাটের গুণগত রং ও মান ভালো হয়নি। যার কারণে পাট থেকে প্রত্যাশিত মূল্য পাচ্ছেন না তারা।”