বর্তমানে আমাদের সকাল শুরু হয় স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন চেক করে। শেষও হয় একই কাজ করে। আমাদের পুরো জীবনটাই যেন এখন আটকে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারাগারে। একারণে অস্থিরতা বেড়ে গেছে মানুষের মধ্যেও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমন একটি ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারী বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করতে পারে তাত্ক্ষণিকভাবে, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা অনুভূতি শেয়ার করতে পারে তাকেই সোশ্যাল মিডিয়া বলে; কিন্তু বর্তমানে এই সোশ্যাল মিডিয়া সোশ্যাল ডিজিজে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে রাত—এমন কোনো সময় নেই যে আমরা মিডিয়ার বাইরে। মূলত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সি মানুষ এটির প্রতি বেশি আসক্ত।সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে আজকাল একটি নতুন টার্ম প্রায়শই শোনা যায়। ফিয়ার অব মিসিং আউট (এফওএমও)। এটি একেবারেই মার্কেটিং গিমিক। দুনিয়ার যে প্রান্তে যা কিছু ঘটছে তা সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে জানতে হবে, এমনটার দিব্যি কেউ দেয়নি। এফএমএফও-র ‘ভয়ে’ সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করুন।
ভার্চুয়াল জগতে নয়, বরং বাস্তবে মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যান। ব্যস্ত রুটিনের বাইরে খানিকটা সময় পেলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করুন। মা-বাবাকে নিয়ে যান ছুটি কাটাতে।স্মার্টফোনের বদলে ঘড়িতে অ্যালার্ম সেট করুন।
এতে স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন এলে সহজেই হাত বাড়িয়ে তা দেখা যায়। ফলে ঘুমের দফারফা হয়। ঘড়িতে অ্যালার্ম সেট করলে অন্তত ওই নোটিফিকেশনগুলোর দাপট থেকে বাঁচবেন। তাতে রাতে ঘুমের ব্যাঘাতও কম হবে।বর্তমানে আমাদের সকাল শুরু হয় স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন চেক করে। শেষও হয় একই কাজ করে। আমাদের পুরো জীবনটাই যেন এখন আটকে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারাগারে। একারণে অস্থিরতা বেড়ে গেছে মানুষের মধ্যেও।অ্যাপ মুছে ফেলা বা সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া। কারণ, মোবাইল স্ক্রিনে চোখ পড়লে সোশ্যাল মিডিয়া আইকন দেখা না গেলে স্বাভাবিক ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা যাবে। নিজেকে সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকার আরেকটি ভালো উপায়।
বেশির ভাগ ফোন এবং ট্যাবলেটে দেখা যায় কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপে কত সময় ব্যয় করা হচ্ছে। নিজেকে সময় বেঁধে দিন, দৈনিক কত সময় আপনি এতে ব্যয় করবেন। শখের কাজ গুরুত্ব দেওয়া বা অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেও আপনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে রাখতে পারেন। অন্যান্য ভালো লাগার কাজ গুলোয় বেশি সময় ব্যয় এই আসক্তি বেশ কমিয়ে আনবে।ডিজিটাল যুগে টিভি স্ক্রিন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল স্ক্রিনে মনের অজান্তেই আমরা সব সময় চোখ মিলে দেখতে থাকি। আবার কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভিতে প্রিয় সিরিজ বা মুভি, কম্পিউটার বা মোবাইলে প্রিয় গেম অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদন খুঁজি ফেরি। তবে এই স্কিনে দেখা দেখি করলে যে কতোটা ক্ষতিকর, সেই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। নেশা বা আসক্তি কাটানোর জন্য অন্য নতুন কোনো শখ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা, খেলাধুলা বা লেখালেখির চর্চা করা অথবা অন্য কোনো ক্রিয়েটিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যায়।পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া যায়।
সোস্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তির কারণে পারিবারিক সুন্দর মুহূর্তগুলো কিন্তু অনেকেরই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিবারের সাথে কিছুটা সময় উপভোগ করুন। এতে করে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর আগ্রহ কিছুটা হলেও কমে যাবে।স্বাধীনতা সবারই দরকার৷ কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। যখন কোনো সমস্যা হচ্ছে তখন বাবা মা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। একটা বাচ্চা যে কীভাবে বড় হচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কীভাবে বড় হওয়া উচিত এই জায়গাগুলোতে ছোটবেলা থেকেই মনোযোগ দিতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর চাইলেও অনেক কিছু হয় না। কারণ যে বাবা-মা আপনাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভ্যস্ত করছেন, তিনি কিন্তু আপনার লিমিট ঠিক করে দিচ্ছেন না। এই জায়গায় প্রথম থেকেই বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব বেশি বাড়াবাড়ি হওয়া উচিত না। তাই আসুন সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ও যথাপুযুক্ত ব্যবহারে জীবনকে আরো সুন্দর করে তুলি। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে তুলি।
আরও পড়ুন: ঢাকা টু কলকাতা ট্যুর পরামর্শ