বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান দিনদিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, ছয়টি রাজনৈতিক দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ বেশ কিছু ছোট-বড় রাজনৈতিক দল সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।
অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ তাদের ১৪ দলীয় জোট।
গত ১৮ অক্টোবর নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নয়াপল্টনে এই মহাসমাবেশ করবে দলটি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চও এদিন সমাবেশ করবে। মৎস্যভবন এলাকায় এই সমাবেশ করবে তারা।
একই দিনে বিজয় নগরে সমাবেশ করবে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
এছাড়া ৩ নভেম্বর ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এদিন বড় জমায়েত করার লক্ষ্য রয়েছে দলটির।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোট ঢাকায় জনসমাবেশ করবে ৩০ অক্টোবর।
সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
২৮ অক্টোবর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো ধরনের গুজব কিংবা জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশের এই ইউনিট। এরই মধ্যে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
ডিএমপির অপারেশন্স শাখার যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মনে করে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে কেউ যদি সমাবেশকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সব ধরনের পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। যখন যে পরিস্থিতি উদ্ভব হবে, তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি।”
একই সঙ্গে ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে সব ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, “ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়াবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যাতে কেউ নাশকতার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে সমাবেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য ঢাকা শহরের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসাবে র্যাব। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও চেকপোস্ট বসানো হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলকেই ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার অনুমতি এখনো দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তবে তিনি বলেছেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘নিবন্ধন না থাকায়’ জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকার সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।”
সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইনসঙ্গতভাবে যদি ১০টি দল চায় যে তারা একই দিন সমাবেশ করবে, আমরা বলব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে, শান্তি রক্ষা করে যদি করতে পারো, তাহলে করবা। আইনশৃঙ্খলা মেনে চললে বিশৃঙ্খলা হবে না।”