জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, “আমরা সংসদে থাকার জন্য নির্বাচন করছি; কোনো ভাগাভাগির নির্বাচন করছি না। আমি তো আসন ভাগ দেইনি তাদেরকে, তাহলে ভাগাভাগি হলো কীভাবে? আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তি করি নাই। মহাজোটে আমরা আগে থাকলেও এখন আমরা জোটে নেই।”
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, “অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে; আমি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, এর আগে আমরা মহাজোটের অংশ ছিলাম। এবার তারসঙ্গে কোনো সর্ম্পকই নেই।”
নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক না থাকলে দলীয়ভাবে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত
তিনি বলেন, “নির্বাচনে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, পেশি শক্তি ও অবৈধ অর্থ ব্যবহারের প্রভাব থেকে নির্বাচনকে মুক্ত রাখতে হবে, নির্বাচনের বিধি মেনে চলতে হবে। এটা যদি তারা মেনে না চলেন তাহলে দলীয়ভাবে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”
জিএম কাদের বলেন, “দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বাইরে থেকে স্বাভাবিক দেখালেও মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। বিএনপি সরকারের পতনের আন্দোলনে আছে। আরেকদিকে সরকার নির্বাচন করার ব্যাপারে অনঢ়; এ অবস্থায় আমাদের অনেক বিষয় ভাবতে হচ্ছে।”
দলের কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা ছিল। নতুন নেতৃত্ব তৈরির অপচেষ্টা ছিল- সবকিছু মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা এখনো ঝুঁকিমুক্ত হতে পারি নাই।”
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “রংপুর আমার প্রাণের শহর। এখানে আমার শিশুকাল, শৈশবকাল, যৌবনকাল এবং জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে। এই শহরের কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। রংপুরবাসীর কথা কোনোদিন আমি মন থেকে দূরে রাখতে পারিনি। আমি অনেক জায়গায় গেছি, সারাদেশের মানুষ আপনাদের দোয়ায় এখন আমাকে চিনে জানে। অনেকে আমার কাছে আসে এবং আমাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও করে। বিদেশের মানুষের কাছেও আমার পরিচিতি আছে। তারা আমার মতামত নেন, কথা বলেন এবং উপদেশও দেন। তারপরও আমার মন পড়ে থাকে রংপুরে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মৃত্যুর পর আমার কবর রংপুরে হবে। আমার মা-বাবার কবরের পাশে আমাকে কবরস্থ করতে আমি পরিবারের সবাইকে বলেছি। আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব। সামনের দিনে আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য ভূমিকা রাখব। আপনাদের যেকোনো সমস্যার বিষয়ে যখন যেটা বলবেন আমি আপনাদের পাশে থাকব। আমি আপনাদের জন্য কাজ করব। আমিসহ আমাদের পুরো পরিবার রংপুরবাসীর কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আমাদের চরম বিপদের সময় আপনারা পাশে ছিলেন।”
আগামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোট। বিএনপি ভোট বর্জন করায় এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাপা। ২৬৫টি আসনে দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়ছে সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি। এককভাবে অংশ নিলেও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করেছে জাপা।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের কাছে ২৬টি আসন পেয়েছিল জাপা; জিতেছিল ২৩টি আসনে। আর তার আগের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৩৪ আসনের সমঝোতা হয় জাপার। সেই ভোটে ৩৪ আসনে জাপার প্রার্থীর বিপক্ষে কোনো প্রতিযোগী রাখেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটসঙ্গী হয়ে জাতীয় পার্টি পায় ৭.০৪% ভোট। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষে ৭% ভোটার রায় দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকার সঙ্গে জোট করে লাঙ্গলে ৫.৩৭% ভোটারের সমর্থন পায় জাপা।