নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই। ভোট কতটা শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তা বোঝার জন্য আরও ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল ভোটে না থাকায় এবং নির্বাচন বর্জনের কর্মসূচি পালন করায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে “সংকট” তৈরির শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) সংসদ নির্বাচনের আগের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত “মিট দ্য প্রেসে” খোলামেলা কথা বলেন সিইসি।
নির্বাচন কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, “কতটা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে কোনও একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতাটা অস্বীকার করছি না।”
“তবে আশা করি, বিরোধিতা সত্ত্বেও পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন উঠে আসবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য আরও ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, সেটা হয়তো দেখতে পারবেন।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল- তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে (তারা) ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে।”
এই নির্বাচনকে “সিলেকশন” আখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা; এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “অনেকে সিলেশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরও কিছু ব্যক্ত করেছেন। তারা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিশেষণগুলো দিয়েছেন। আমাদের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা। রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িত হওয়া আমাদের কাজ না। হচ্ছিও না। যেসব বিতর্ক বলা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর সুরাহা রাজনীতিবিদরা করবেন।”
নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে সিইসি বলেন, “গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই। এটা আপেক্ষিক বিষয়। কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য, কেউ বলবেন হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করব নির্বাচনকে সর্বাঙ্গীন গ্রহণযোগ্য করতে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আসছেন। আপনারা দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন। এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উঠে এলে মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের নিরাপত্তায় আট লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। বড় দল ভোটবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে; শান্তিপূর্ণ হলে কিছু মনে করব না। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলবে, সেটা অপরাধ। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।”
সিইসি বলেন, “নির্বাচন কমিশন কি কোনো রাজনৈতিক দল? কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক…। কোনো বিশেষজ্ঞ কি বলবেন, ১০ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন! দলগুলো সমঝোতায় এলে ভোট করুন। তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ করে দেব।”
তিনি বলেন, “ইসির একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের জন্য সম্পৃক্ত থাকবেন না। সেই ভোটগ্রহণের মধ্যেই যদি কারচুপি হয়, কিছু দায়ভার আমাদের ওপর আসবে। কেন্দ্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রিসাইডিং অফিসার। তার দায়িত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দায়ভার আপনাদেরও নিতে হবে। কেননা, ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ অধিকার থাকবে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারে।”
মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবে। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা (ভিসানীতি) নিয়ে চিন্তিত নই। এটা আমাদের বিষয় নয়।”
নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, সরকার কে হবে তা জানা- এই পরিস্থিতিতে ইসি বিব্রত কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।”
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচন কমিশন হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বডি। আমরা বিশ্বাস করি- গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছতামূলক নির্বাচন। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক আমরা সেটা চাই।”