পিঠাপুলি আর গানে সুরের ধারার পৌষ উৎসব

ন্যাশনাল ডেস্ক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
পিঠাপুলি আর গানে সুরের ধারার পৌষ উৎসব
ছবি: সংগৃহীত

পৌষের শেষে এসে কনকনে শীত পড়েছে রাজধানীতে। কুয়াশার ঘোরে দিনের বেলায়ও রোদ মলিন। উত্তাপহারা। পৌষ উৎসবের জন্য এমন পরিবেশই মানানসই। দিনের শেষে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেড়িবাঁধের পশ্চিমে সুরের ধারার নিজস্ব স্থানে হরেক রকম পিঠাপুলি আর গানের সুর, নাচের ছন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

আজ শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে শুরু হলো দুই দিনের পৌষ উৎসব। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরের ধারার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই জায়গাটি বরাদ্দ দেন। এখনো ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা খোলা মাঠের মতো জায়গাটিতেই পৌষ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়রের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শায়লা সাগুপ্তা ইসলাম, সুরের ধারার অধ্যক্ষ বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অধ্যাপক সফি উদ্দিন আহমেদ। ডিএনসিসি পৌষ উৎসবের সহযোগী।

উৎসব উপলক্ষে মাঠের পূর্ব পাশে প্রাচীর ঘেঁষে স্টলের সারি। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির সঙ্গে রয়েছে হরেক রকম হস্ত ও কারুশিল্প সামগ্রী। উত্তর প্রান্তে বসানো হয়েছে চরকি, নাগরদোলাসহ বেশ কয়েক রকমের রাইড। রীতিমতো মেলার আয়োজন। বিকেল চারটা থেকেই আশপাশের বাসিন্দারা গায়ে গরম কাপড় চাপিয়ে সপরিবার এই মেলায় আসতে থাকেন। প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যার পরে। প্রধান অতিথি মেয়র আতিকুল ইসলাম উৎসবে এলে সুরের ধারার শিশু শিক্ষার্থীরা ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ গান গেয়ে, নেচে শোভাযাত্রা করে তাঁকে স্বাগত জানায়। পরে তারা ‘ফিরে চল মাটির টানে’ গানের সঙ্গে নৃত্য করে অনুষ্ঠান মঞ্চ পরিক্রম করে। খড়ের ছাউনি, বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে গ্রামীণ বাড়ির আদলে মঞ্চ আর তার আশপাশ সুদৃশ্যভাবে সাজানো হয়েছে।

উৎসবের উদ্বোধন করে মেয়র সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে অপশক্তিকে প্রতিরোধ করার কথা উল্লেখ করে বললেন, সুরের ধারা এই কাজে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি জানান, ডিএনসিসি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার বিকাশে সহায়তা দিয়ে যাবে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বললেন, সুরের ধারার আয়োজনে এবার ১১তম বারের মতো পৌষ উৎসব হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এই ঋতুভিত্তিক উৎসবে আয়োজন করতেন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টির জন্য। সেই চেতনা নিয়েই সুরের ধারা পৌষ উৎসব করে আসছে। প্রতিবছরই এই উৎসবের একটি মূলভাব থাকে। এবারের বিষয় বাংলার লোকসংগীত। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে লোকসংগীতের বিভিন্ন ধারার গান ও সঙ্গে নৃত্য দিয়ে। দ্বিতীয় দিনে থাকবে পঞ্চকবির লোক আঙ্গিকের গান। সুরের ধারাকে ভবনের জন্য জায়গাটি দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উৎসবে সহযোগিতার জন্য ডিএনসিসির মেয়রকে ধন্যবাদ জানান।

মঞ্চের গানের পালা শুরু হয়েছিল সুরের ধারার শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে ‘আমার টুসু ধনে বিদায় দেব কেমনে’ গানটি দিয়ে। পরে তারা পরিবেশন করেন ‘বিধুর এ লগন’ সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য। পরের গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘মানুষ ছাড়া খ্যাপারে তুই’, ‘ও ঢেউ খেলেরে’, ‘ছাড়িলাম হাছনের নাও’—এসব। সমবেত নৃত্য ছিল ‘সোহাগ চাঁদ বদনী’ গানের সঙ্গে। একক পরিবেশনায় দেব প্রসাদ পরিবেশন করে ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’। বিশেষ অনুরোধে মেয়র নিজেও গেয়ে শোনালেন ‘ইস্কুল খুইলাছে রে মওলা’। এরপর মেয়রের অনুরোধ রক্ষা করে রেজওনা চৌধুরী বন্যা পরিবেশন করেন ‘আমি কান পেতে রই’। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইলেন ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ’। পরে ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গান, নৃত্যের পরিবেশনা। শীতের রাত মুখর হয়ে উঠেছিল সুরে সুরে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পিঠাপুলি আর গানে সুরের ধারার পৌষ উৎসব

পিঠাপুলি আর গানে সুরের ধারার পৌষ উৎসব
ছবি: সংগৃহীত

পৌষের শেষে এসে কনকনে শীত পড়েছে রাজধানীতে। কুয়াশার ঘোরে দিনের বেলায়ও রোদ মলিন। উত্তাপহারা। পৌষ উৎসবের জন্য এমন পরিবেশই মানানসই। দিনের শেষে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেড়িবাঁধের পশ্চিমে সুরের ধারার নিজস্ব স্থানে হরেক রকম পিঠাপুলি আর গানের সুর, নাচের ছন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

আজ শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে শুরু হলো দুই দিনের পৌষ উৎসব। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরের ধারার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই জায়গাটি বরাদ্দ দেন। এখনো ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা খোলা মাঠের মতো জায়গাটিতেই পৌষ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়রের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শায়লা সাগুপ্তা ইসলাম, সুরের ধারার অধ্যক্ষ বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অধ্যাপক সফি উদ্দিন আহমেদ। ডিএনসিসি পৌষ উৎসবের সহযোগী।

উৎসব উপলক্ষে মাঠের পূর্ব পাশে প্রাচীর ঘেঁষে স্টলের সারি। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির সঙ্গে রয়েছে হরেক রকম হস্ত ও কারুশিল্প সামগ্রী। উত্তর প্রান্তে বসানো হয়েছে চরকি, নাগরদোলাসহ বেশ কয়েক রকমের রাইড। রীতিমতো মেলার আয়োজন। বিকেল চারটা থেকেই আশপাশের বাসিন্দারা গায়ে গরম কাপড় চাপিয়ে সপরিবার এই মেলায় আসতে থাকেন। প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যার পরে। প্রধান অতিথি মেয়র আতিকুল ইসলাম উৎসবে এলে সুরের ধারার শিশু শিক্ষার্থীরা ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ গান গেয়ে, নেচে শোভাযাত্রা করে তাঁকে স্বাগত জানায়। পরে তারা ‘ফিরে চল মাটির টানে’ গানের সঙ্গে নৃত্য করে অনুষ্ঠান মঞ্চ পরিক্রম করে। খড়ের ছাউনি, বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে গ্রামীণ বাড়ির আদলে মঞ্চ আর তার আশপাশ সুদৃশ্যভাবে সাজানো হয়েছে।

উৎসবের উদ্বোধন করে মেয়র সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে অপশক্তিকে প্রতিরোধ করার কথা উল্লেখ করে বললেন, সুরের ধারা এই কাজে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি জানান, ডিএনসিসি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার বিকাশে সহায়তা দিয়ে যাবে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বললেন, সুরের ধারার আয়োজনে এবার ১১তম বারের মতো পৌষ উৎসব হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এই ঋতুভিত্তিক উৎসবে আয়োজন করতেন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টির জন্য। সেই চেতনা নিয়েই সুরের ধারা পৌষ উৎসব করে আসছে। প্রতিবছরই এই উৎসবের একটি মূলভাব থাকে। এবারের বিষয় বাংলার লোকসংগীত। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে লোকসংগীতের বিভিন্ন ধারার গান ও সঙ্গে নৃত্য দিয়ে। দ্বিতীয় দিনে থাকবে পঞ্চকবির লোক আঙ্গিকের গান। সুরের ধারাকে ভবনের জন্য জায়গাটি দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উৎসবে সহযোগিতার জন্য ডিএনসিসির মেয়রকে ধন্যবাদ জানান।

মঞ্চের গানের পালা শুরু হয়েছিল সুরের ধারার শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে ‘আমার টুসু ধনে বিদায় দেব কেমনে’ গানটি দিয়ে। পরে তারা পরিবেশন করেন ‘বিধুর এ লগন’ সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য। পরের গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘মানুষ ছাড়া খ্যাপারে তুই’, ‘ও ঢেউ খেলেরে’, ‘ছাড়িলাম হাছনের নাও’—এসব। সমবেত নৃত্য ছিল ‘সোহাগ চাঁদ বদনী’ গানের সঙ্গে। একক পরিবেশনায় দেব প্রসাদ পরিবেশন করে ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে’। বিশেষ অনুরোধে মেয়র নিজেও গেয়ে শোনালেন ‘ইস্কুল খুইলাছে রে মওলা’। এরপর মেয়রের অনুরোধ রক্ষা করে রেজওনা চৌধুরী বন্যা পরিবেশন করেন ‘আমি কান পেতে রই’। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি গাইলেন ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ’। পরে ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গান, নৃত্যের পরিবেশনা। শীতের রাত মুখর হয়ে উঠেছিল সুরে সুরে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত