যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত নাইটাজিন সেবনের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে৷ এটি হেরোইনের চেয়ে ৫০০ গুণ পর্যন্ত শক্তিশালী বলে জানা গেছে৷
ফেব্রুয়ারি মাসে লানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালকে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে “ইউরোপিয়ান মনিটরিং সেন্টার ফর ড্রাগস অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন” লিখেছে, অতিরিক্ত মাদকসেবনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করে শরীরে নাইটাজিনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ ২০২২ সাল থেকে এমন মরদেহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷
১৯৫০-এর দশকে ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য নাইটাজিন আবিষ্কার করা হয়েছিল৷ কিন্তু মানুষ ও প্রাণীর শরীরে ব্যবহারের জন্য এটি কখনও অনুমোদন করা হয়নি৷
হেরোইন বা ক্যানাবিস চাষ করা হলেও নাইটাজিন ও ফেন্টানলের মতো সিন্থেটিক ড্রাগ রাসায়নিক উপাদান দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়৷
২০১৯ সালের দিকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বাল্টিক দেশগুলোতে নাইটাজিন সেবন শুরু হয়৷ তবে ১৯৯৮ সালে রাশিয়ায় কিছু মৃত্যুর কারণ নাইটাজিন ছিল বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নাইটাজিন হলো সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ। অর্থাৎ এটি, “উপলব্ধি, চেতনা, বোধশক্তি বা মেজাজ এবং আবেগের মতো মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে৷”
নাইটাজিন সেবনের প্রভাব অন্যান্য অপিওয়েডের মতো৷ যেমন উচ্ছ্বাস, অবসাদ, এবং এক ধনেরর ঘুম-ঘুম চেতনা৷ তবে এতে শ্বাসযন্ত্রের ডিপ্রেশন, এমনকি শ্বাস বন্ধও হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷
পাউডার আকারে বিক্রি করা নাইটাজিনের রং হলুদ, খয়েরি বা অফ-হোয়াইট হয়ে থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, পিল বা বড়িতেও নাইটাজিন ঢোকানো হচ্ছে এবং ওষুধ বলে মিথ্যাভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে৷
উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক অবৈধ ওষুধের সঙ্গে নাইটাজিন মেশানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে৷
যুক্তরাজ্যের “অ্যডভাইজারি কাউন্সিল অন দ্য মিসইউজ অফ ড্রাগস” এক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী নাইটাজিন হিসেবে এটোনাইটাজিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ এরপর শক্তির ক্রম অনুসারে আছে আইসোটোনাইটাজিন, প্রোটোনাইটাজিন, মেটোনাইটাজিন, বুটোনাইটাজিন, এটোডেসনাইটাজিন, ফ্লুনাইটাজিন ও মেটোডেসনাইটাজিন৷
নাইটাজিন নিয়ে বিজ্ঞানীদের করা কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এটোনাইটাজিন মরফিনের চেয়ে এক হাজার গুণ শক্তিশালী, আর আইসোটোনাইটাজিন মরফিনের চেয়ে ৫০০ গুণ শক্তিশালী৷ উত্তর অ্যামেরিকায় আইসোটোনাইটাজিন আইএসও বা আইসো হিসেবে পরিচিত৷