গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী তরুণ ব্যবসায়ীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানের মেয়ে কানতারা কে খানের প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এতে দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফলে এর প্রভাব পড়তে পারে।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, আগামী ২১ মে মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার জন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাবির মিয়া (ঘোড়া), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএম মহিউদ্দিন আহমেদ (মোটরসাইকেল), তরুণ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম রাজ (দোয়াত কলম) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কাইমুজ্জামান রানা (আনারস)।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য কোনো প্রার্থীকে দল থেকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে মুকসুদপুর উপজেলা গঠিত। উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৮৯ জন। মুহাম্মদ ফারুক খান এ এলাকার সন্তান এবং গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার ৭ ইউনিয়ন) থেকে ষষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য। তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুহাম্মদ ফারুক খানকে তাদের অভিভাবক মনে করেন।
গত উপজেলা নির্বাচনে এমএম মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে সমর্থন দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাবির মিয়ার কাছে পরাজিত হন। মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রত্যাশা করছিলেন চেয়ারম্যান পদে এবারও ফারুক খান সমর্থন দেবেন এমএম মহিউদ্দিন আহমেদকে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মুহাম্মদ ফারুক খান এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
অপরদিকে, তরুণ ব্যবসায়ী ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কাশেম রাজের পক্ষে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং মুহাম্মদ ফারুক খানের মেয়ে কানতারা কে খানের গণসংযোগ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও অনেকে এটাকে সমস্যা মনে করছেন না।
নাম না প্রকাশের শর্তে মুকসুদপুর উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘মুহাম্মদ ফারুক খান আমাদের অবিভাবক। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মুকসুদপুর আওয়ামী লীগ এমএম মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে কাজ করছে। মন্ত্রীর মেয়ে কানতারা কে খান যদি অন্য প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নেমে ভোট চান, তা মোটেও শোভনীয় নয়। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়। মতনৈক্য মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।’
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খান্দারপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাব্বির খান বলেন, ‘ফারুক খান আমাদের অবিভাবক। আমরা দলের জন্য নিবেদিত এমএম মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে কাজ করছি। আমাদের উপর কোনো চাপও নেই। তবে কানতারা কে খানের এখন মুকসুদপুর থাকাটা আমাদের প্রার্থীর জন্য মোটেও সুখকর নয়।’
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঘদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, ‘কানতারা কে খান কারও পক্ষে ভোট চাননি। তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, যিনি এলাকার উন্নয়ন করতে পারবেন এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী নয়, এমন উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। এতে আমি খারাপ কিছু দেখি না।’
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সভাপতি রবিউল আলম সিকদার বলেন, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯৯ ভাগ নেতাকর্মী এমএম মহিউদ্দিন আহমেদকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলে এবারও তিনি প্রার্থী হতেন। কানতারা কে খান যাকে নিয়ে প্রচারণা করছেন, তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নবাগত। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অনৈক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। ফারুক খানকে যারা পছন্দ করেন না, তারা লাভবান হবেন। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে এজন্য তাকে খেসারত দিতে হবে।
কানতারা কে খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা এমন একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে চাই, যিনি হবেন তারুণ্য ও সততার প্রতীক। যিনি তরুণদের নিয়ে চিন্তা করেন। এলাকার উন্নয়নের পাশাপশি স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে যিনি ভাববেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের কেবল ভদ্রলোক হলে চলবে না। যিনি যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে সহায়তার হাত বাড়বেন, নিজ উদ্যোগে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেবেন, এরকম নেতা খুব দরকার। আগামী ৫ বছর যার হাত ধরে মুকসুদপুরের উন্নয়ন হবে, এমন উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে। দল নির্বাচন উম্মুক্ত করেছে। নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য কাজ করবে। এখানে বিভক্তির কিছু দেখছি না। সকল প্রার্থী তো আওয়ামী লীগ করে, তাহলে সমস্যা কোথায়। যদি কোনো ভুল হয়েই যায়, ওই ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নেব।’