গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে। এতে রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হোসেন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এই হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এর আগে শিক্ষককে মারতে যাওয়া, হুমকি, অশ্রাব্য ভষায় গালাগাল ও আইন বিভাগের ক্লাস চলাকালে বিঘ্ন ঘটানোয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেয় বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ জমা দিয়ে আসার পথে হঠাৎ আন্দোলনকারীদের বাগবিতণ্ডার জেরে এক পর্যায়ে এই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী ও রেজিস্ট্রার অপসারণ আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবিদ হোসেন জানান, ‘চলমান আন্দোলনের ব্যপারে আমরা কয়েকজন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে অবগত করার এক পর্যায়ে আইন বিভাগে গিয়ে কথা বলি। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষক লিমন হোসেন আমাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। আমাদের আন্দোলনের কথা জানানো মাত্রই তিনি আমার উপর উগ্র আচরণ শুরু করেন। প্রথমে বাবা-মা তুলে গালি-গালাজ, পরে সরাসরি আক্রমণ করেন। মুখে ও বুকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষক এবং অন্যান্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন যারা লিমন হোসেনকে মারতে বাধা দিতে থাকেন।’
‘আইন বিভাগ থেকে ফিরে ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে আসার কিছুক্ষণ পরেই অন্তু দেওয়ান সহ আইনের কিছু শিক্ষার্থী এবং অন্য বিভাগের কয়েকজন এসে অতর্কিত হামলা করে বসে। মারের প্রকোপে মাটিতে পড়ে গেলেও তাদের মারধর চলতেই থাকে। পরবর্তীতে আমার সহযোগীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
উক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত আইন বিভাগের প্রভাষক লিমন হোসেন আহত আবিদের দিকে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজনীতি বিভাগের আবিদ ও রসায়ন বিভাগের নাসিম সহ ৩-৪ জন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে এবং আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমাকে অপমান মূলক কথা বলে। এক পর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসে৷ তখন আমাদের বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এর সমাধান করে।’
মারতে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে লিমন হোসেন জানান, ‘আমাকে কিছু শিক্ষার্থী এসে জানায় যে, আমার ক্লাসের সময়ে রসায়ন এবং রাজনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রারের বিপক্ষে মানববন্ধন করার জন্য আমাদের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং রীতিমত জোর-জবরদস্তি শুরু করে৷ এটা শোনার পর আমি ঐ সকল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য বের হই ও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। তখনই তারা ক্ষিপ্ত হয় ও ঘটনাটি ঘটে।’
তিনি আরো জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে জানতে পারি নিচে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।’
অন্য দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলনের ব্যাপারে বিভিন্ন বিভাগে জানাতে জানাতে আইন বিভাগে আসেন কথা শেষ করে বের হওয়ার পরেই আইন বিভাগের শিক্ষক লিমন হোসেন আবিদকে ডেকে বিভাগে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। আবিদ রেজিস্ট্রার অপসারণ আন্দোলনের কথা বলা মাত্রই হুমকিধামকি শুরু করেন এবং আবিদের কলার ধরে চড় থাপ্পড় শুরু করেন। এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে তাকে অন্যরা ফেরাতে পারছিলেন না। এরপর লিমন হোসেন তার সমর্থিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ দিতে যান। পরবর্তীতে তারই সমর্থিত কিছু শিক্ষার্থী আবিদকে ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে একা পেয়ে বেধড়ক মারধর করেন।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘এই অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’