বিসিবির নতুন বস ফারুক আহমেদ হট সিটে বসে প্রথম যে বার্তা দিয়েছেন তা যদি ঠিকঠাক পালন করা যায় তাতে আখেরে লাভ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের! সেটা কেমন? সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান বিসিবিতে লম্বা সময় কাটিয়েছেন। তার তিন মেয়াদে সভাপতি থাকাকালীন বিসিবিতে সেচ্ছাচারিতা বাদে কিছুই হয়নি! জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি হলেও ধারাবাহিকতা থাকেনি। এর বাইরে মানহীন ঘরোয়া ক্রিকেট, কমিশন বাণিজ্য, ব্যক্তির সেচ্ছাচারিতায় ক্লাব ক্রিকেট ধ্বংস, অনিয়মের পাহাড়, দুর্বল অবকাঠামো, আর্থিক স্বচ্ছতাসহ নানা অভিযোগের পাড়ায় ক্রিকেট প্রশাসনে।
মোদ্দা কথা, হোম অব ক্রিকেটের পুরো সিস্টেমটাই ছিল তালগোল পাকানো। তাইতো ফারুক আহমেদ বলতে বাধ্য হন, ‘আমি জানি, অনেক অনিয়ম হয়েছে। দিনের পর দিন অনিয়ম হতে হতে (কেউ কেউ) ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে গেছে।’
রাষ্ট্রের মতো বিসিবিও দুর্নীতির বাইরে নয় সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে এমন দুর্নীতি হয়েছে, যা আমরা জানি। প্রতিটি সংস্থায় যে দুর্নীতি হয়েছে, ক্রিকেট বোর্ডও এর বাইরে নয়।’
সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা! বিসিবির অবস্থাও তাই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে বোর্ড পরিচালক নির্বাচিত হয়ে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্বটা তার তাই আরেকটু বেশি। কতদিন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন সেই সম্পর্কে জানা নেই। তবে যতদিন সভাপতির পদে থাকবেন ততদিন নিজের আঙ্গিনা পরিস্কার রাখার প্রতিশ্রুতি তার, ‘দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। কেউ যদি এটা বলে, আমি বিশ্বাস করব না। তবে একটা সিস্টেম চালু করতে হবে, যেখানে এসব (দুর্নীতি) আমরা কমাতে পারব।’
ঢালাওভাবে সব কাজ একসঙ্গে করলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না তা বেশ ভালোভাবেই জানেন ফারুক আহমেদ। শুরুতে ক্রিকেটারদের স্বার্থই দেখছেন তিনি, ‘আমরা প্রথমেই মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টে যাব না। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেমন জাতীয় দলের খেলা বাদ দেওয়া যাবে না। জাতীয় দল প্রাধান্য পাবেই। সঙ্গে গেম ডেভেলপমেন্ট, এইচপি (হাই পারফরম্যান্স), ফ্যাসিলিটিজ, গ্রাউন্ডস, এই ধরনের চার-পাঁচটা জায়গা আছে, যেগুলো ক্রিকেটের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এসব জায়গায় ফোকাস করতে হবে।’
কথা কম কাজ বেশি! ঠিক যেন নাজমুল হাসানের উল্টোটাই ভাবছেন ফারুক আহমেদ, ‘আমাদের লক্ষ্য হবে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করা। আমি মুখে অনেক কিছু বললাম, অনেক স্বপ্ন দেখালাম, কিন্তু দেখতে গিয়ে যদি দেখেন যে, কথার কাছাকাছি কিছু আমি করতে পারিনি, তাহলে তো হবে না। এজন্য কথা কমিয়ে দিয়ে, ক্রিকেটের জন্য যে জায়গাগুলি গুরুত্বপূর্ণ, ওই জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’
বিসিবির ১৫তম সভাপতি ফারুক। এই প্রথম কোনো সাবেক ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পেলেন। সাবেক এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। ১৯৯৩ আইসিসি ট্রফিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। খেলা ছাড়ার পর বোর্ডের ম্যানেজার, প্রধান নির্বাচক হয়ে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার আরও বড় পরিসরে দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতে পারলে সামনে সাবেক আরও ক্রিকেটারের জন্য দরজা খুলে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।