চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার

এস এম শরিফুল ইসলাম জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল
চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার
চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার

দুই পাশে লোকালয়, হাটবাজার ও স্কুল-কলেজ। মাঝখানে খাল। সেই খাল পারাপারে সাঁকোই ভরসা মানুষের। দু-এক দিন নয়, ৫২ বছর ধরে নড়াইল সদরের চার ইউনিয়নের ৪৫ হাজার লোকজনের।

মরা চিত্রা নামের এ খালের উৎপত্তি মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট মোড়ে কাজলা নদী থেকে। পরে সেটি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও শাহাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা ত্রিমোহনীতে গিয়ে চিত্রা নদীতে মিশেছে এ মরা চিত্রা। শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুর এলাকায় এই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে চারটি হাটবাজার, একটি কলেজ, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল সদরের সরশপুর এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো। প্রা ১০ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি। এমন ১৮টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সাঁকোটি। ধরার জন্য আড়াআড়িভাবে দুই পাশে দুটি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য এলাকাবাসী নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন খালের পশ্চিম পাড়ের চরবিলা গ্রামের কামাল শেখ (৭০)।

ক্ষোভ জানিয়ে কামাল শেখ বলেন, ‘এখানে একটা পাকা সেতু বানায় দিলি আমাগে কষ্ট কুমে যায়। কত নেতারে কলাম (বললাম)। কতবার চিয়ারমেনগে (চেয়ারম্যানদের) কলাম। তারা শুধু কয় ‘দেকতিছি’ (দেখছি)। বুঝার পর থেকে ৫২ বছর শুধু শুনেই গেলাম।’ দেশ স্বাধীনের পর এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছেন। এ সময়ে খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে এলাকার চালচিত্র। বদলায়নি কেবল বাঁশের সাঁকোটি।

খালের পূর্ব পাড়ে সরশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা খাতুন জানায়, তার বাড়ি খালের পশ্চিম পাড়ের আড়ংগাছা গ্রামে। স্কুলে আসার সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে। মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম মোল্যা এবং শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। সেতু নির্মাণের মতো অর্থ তাদের বরাদ্দ নেই। এখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ ব্যাপারে নড়াইল এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির মেহেদী হাসান বলেন, ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঠিকাদারদের নিয়োগ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার

চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার
চার ইউনিয়নের লোকজনের ৫২ বছর ধরে সাঁকোতে পারাপার

দুই পাশে লোকালয়, হাটবাজার ও স্কুল-কলেজ। মাঝখানে খাল। সেই খাল পারাপারে সাঁকোই ভরসা মানুষের। দু-এক দিন নয়, ৫২ বছর ধরে নড়াইল সদরের চার ইউনিয়নের ৪৫ হাজার লোকজনের।

মরা চিত্রা নামের এ খালের উৎপত্তি মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট মোড়ে কাজলা নদী থেকে। পরে সেটি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও শাহাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা ত্রিমোহনীতে গিয়ে চিত্রা নদীতে মিশেছে এ মরা চিত্রা। শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুর এলাকায় এই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে চারটি হাটবাজার, একটি কলেজ, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল সদরের সরশপুর এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো। প্রা ১০ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি। এমন ১৮টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সাঁকোটি। ধরার জন্য আড়াআড়িভাবে দুই পাশে দুটি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য এলাকাবাসী নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন খালের পশ্চিম পাড়ের চরবিলা গ্রামের কামাল শেখ (৭০)।

ক্ষোভ জানিয়ে কামাল শেখ বলেন, ‘এখানে একটা পাকা সেতু বানায় দিলি আমাগে কষ্ট কুমে যায়। কত নেতারে কলাম (বললাম)। কতবার চিয়ারমেনগে (চেয়ারম্যানদের) কলাম। তারা শুধু কয় ‘দেকতিছি’ (দেখছি)। বুঝার পর থেকে ৫২ বছর শুধু শুনেই গেলাম।’ দেশ স্বাধীনের পর এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছেন। এ সময়ে খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে এলাকার চালচিত্র। বদলায়নি কেবল বাঁশের সাঁকোটি।

খালের পূর্ব পাড়ে সরশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা খাতুন জানায়, তার বাড়ি খালের পশ্চিম পাড়ের আড়ংগাছা গ্রামে। স্কুলে আসার সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে। মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম মোল্যা এবং শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। সেতু নির্মাণের মতো অর্থ তাদের বরাদ্দ নেই। এখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ ব্যাপারে নড়াইল এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির মেহেদী হাসান বলেন, ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঠিকাদারদের নিয়োগ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত