মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, কেমন আছে পথশিশুরা

,
মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, কেমন আছে পথশিশুরা
ছবি: সংগৃহীত

কোনো শিশুই পথে জন্মানোর কারণেই সে পথশিশু হয় না। জন্মের সময় প্রতিটি শিশুই তার নাগরিক অধিকার নিয়ে জন্মায়। দেশের প্রতি শিশুর অধিকার থাকে একটি সুন্দর পরিবার ও পরিবেশ পাবার। আমাদের সমাজই এই শিশুদের পথশিশু হিসেবে তৈরি করে। এইতো রমজানের এই ইফতারের বিষয়টাই ধরা যাক। ইফতার আমাদের কাছে বিশাল একটা আনন্দের বিষয়। কেননা, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার আমাদের মাঝে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। আমরা পরিবার, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করি। নানান কারণে আমাদের অনেকেই রোজা রাখতে না পারলেও ইফতারে অংশ নেই। কিন্তু সমাজে প্রচুর অসহায় ও দরিদ্র মানুষ রয়েছেন, যাদের ভালো একটু ইফতার করার সামর্থ্য নেই। এদেরই একটি অংশ হচ্ছে পথশিশু ও তাদের পরিবার। যাদের এক বেলা খাবার জুটলে পরের বেলা খাবারের ঠিক নেই।

দেশে পথশিশুদের সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষণার তথ্বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ পথশিশু রয়েছে; যার প্রায় অর্ধেকেরই বাস জাদুর শহর, রঙের শহর ঢাকায়। রাজধানীর পথশিশুদের কয়েকটি ভাগ রয়েছে।

১. কিছু শিশু যারা ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় থাকে। তাদের থাকার কোন জায়গা নেই। এ ধরনের পথশিশুদের বেশিরভাগ হয় এতিম নয় বাবা-মা তাদের ফেলে রেখে গেছে।

২. কিছু পথশিশুর পরিবার আছে। তারা দিনের বেলায় রাস্তায় থাকলেও রাতে পরিবারের সঙ্গে বাসায় বা অন্য কোথাও থাকে।

৩. কিছু পথ শিশু যারা পরিবারসহ রাস্তাতেই থাকেন।

আমাদের চারপাশে থাকা এই পথশিশুদের রোজা কেমন কাটছে? আমরা জানতে চাই বা কয়জন। তারা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়ে তারা জীবন কাটায়। তাদের নির্দিষ্ট কোনো আবাস নেই। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বাসস্টেশনই তাদের বাড়ি। পথশিশুদের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৬ সালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)। সেখানে উঠে আসে, সারাদিন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে , ট্রাফিকের ভীড়ে দেখা পাওয়া যায় তাদের। ইফতার, সেহেরীর খাবারের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এক বেলা খেলে পরের বেলা কি খাবে তার নিশ্চয়তা নেই। রাতের বেলায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে,রেল লাইনে হাটলেই দেখতে পাওয়া যাবে এই পথশিশুদের। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা থেকে মাঝেমধ্যে এক বেলা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তখনই এরাপেট পুরে খেতে পারে কিন্তু যেহেতু পথশিশুরা ছোট, ও অভিভাবক বিহীন তাই পরের বেলা খাবারের নিশ্চয়তা কেউ ই দিতে পারে না। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন মহল ও সরকারের আরও সর্তক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

পথশিশুদের বড় একটি অংশ আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। যেখানে মা বাবা অনেক সময় থাকেও না , থাকলেও তারা নানান অসুবিধায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয়স্থান হিসাবে পথকে বেছে নিয়েছে। এছাড়া বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা একাধিক বিয়ে, তাদের মৃত্যু, পারিবারিক কলহ, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নদীভাঙন, হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুরা পরিণত হয় পথশিশুতে।

আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে। কিন্তু পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।

রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১, কিংবা এসডিজি, কোনোটাই অর্জন সম্ভব নয় ১০-১৫ লাখ শিশুকে পথে রেখে। আমরা তো সোনার বাংলা অর্জনের কথা বলি। পথশিশুর বোঝা কাঁধে নিয়ে সোনার বাংলা অর্জন সম্ভব? বিভিন্ন সময়ে শিশুবান্ধব নানা কর্মসূচি ও প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এগুলো আসলে যথেষ্ট নয়।পথশিশু একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়।

পথশিশুদের জন্য প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত নীতিমালা ও প্রকল্প এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। তখনই আশা করতে পারি, একটা নির্দিষ্ট সময় পর পথশিশু নামক কোনো টার্ম বাংলাদেশে থাকবে না। আমাদের উচিৎ পথ শিশুদের জন্য হোমের ব্যবস্থা করা যেখানে এদের মৌলিক অধিকার গুলো আদায় হবে, যেখানে এরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুবিধা পাবে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারবে। এই অনিশ্চিত ভবিষৎ গুলোকে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, কেমন আছে পথশিশুরা

মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, কেমন আছে পথশিশুরা
ছবি: সংগৃহীত

কোনো শিশুই পথে জন্মানোর কারণেই সে পথশিশু হয় না। জন্মের সময় প্রতিটি শিশুই তার নাগরিক অধিকার নিয়ে জন্মায়। দেশের প্রতি শিশুর অধিকার থাকে একটি সুন্দর পরিবার ও পরিবেশ পাবার। আমাদের সমাজই এই শিশুদের পথশিশু হিসেবে তৈরি করে। এইতো রমজানের এই ইফতারের বিষয়টাই ধরা যাক। ইফতার আমাদের কাছে বিশাল একটা আনন্দের বিষয়। কেননা, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার আমাদের মাঝে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। আমরা পরিবার, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করি। নানান কারণে আমাদের অনেকেই রোজা রাখতে না পারলেও ইফতারে অংশ নেই। কিন্তু সমাজে প্রচুর অসহায় ও দরিদ্র মানুষ রয়েছেন, যাদের ভালো একটু ইফতার করার সামর্থ্য নেই। এদেরই একটি অংশ হচ্ছে পথশিশু ও তাদের পরিবার। যাদের এক বেলা খাবার জুটলে পরের বেলা খাবারের ঠিক নেই।

দেশে পথশিশুদের সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষণার তথ্বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ পথশিশু রয়েছে; যার প্রায় অর্ধেকেরই বাস জাদুর শহর, রঙের শহর ঢাকায়। রাজধানীর পথশিশুদের কয়েকটি ভাগ রয়েছে।

১. কিছু শিশু যারা ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় থাকে। তাদের থাকার কোন জায়গা নেই। এ ধরনের পথশিশুদের বেশিরভাগ হয় এতিম নয় বাবা-মা তাদের ফেলে রেখে গেছে।

২. কিছু পথশিশুর পরিবার আছে। তারা দিনের বেলায় রাস্তায় থাকলেও রাতে পরিবারের সঙ্গে বাসায় বা অন্য কোথাও থাকে।

৩. কিছু পথ শিশু যারা পরিবারসহ রাস্তাতেই থাকেন।

আমাদের চারপাশে থাকা এই পথশিশুদের রোজা কেমন কাটছে? আমরা জানতে চাই বা কয়জন। তারা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়ে তারা জীবন কাটায়। তাদের নির্দিষ্ট কোনো আবাস নেই। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বাসস্টেশনই তাদের বাড়ি। পথশিশুদের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৬ সালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)। সেখানে উঠে আসে, সারাদিন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে , ট্রাফিকের ভীড়ে দেখা পাওয়া যায় তাদের। ইফতার, সেহেরীর খাবারের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এক বেলা খেলে পরের বেলা কি খাবে তার নিশ্চয়তা নেই। রাতের বেলায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে,রেল লাইনে হাটলেই দেখতে পাওয়া যাবে এই পথশিশুদের। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা থেকে মাঝেমধ্যে এক বেলা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তখনই এরাপেট পুরে খেতে পারে কিন্তু যেহেতু পথশিশুরা ছোট, ও অভিভাবক বিহীন তাই পরের বেলা খাবারের নিশ্চয়তা কেউ ই দিতে পারে না। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন মহল ও সরকারের আরও সর্তক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

পথশিশুদের বড় একটি অংশ আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। যেখানে মা বাবা অনেক সময় থাকেও না , থাকলেও তারা নানান অসুবিধায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয়স্থান হিসাবে পথকে বেছে নিয়েছে। এছাড়া বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা একাধিক বিয়ে, তাদের মৃত্যু, পারিবারিক কলহ, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নদীভাঙন, হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুরা পরিণত হয় পথশিশুতে।

আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে। কিন্তু পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।

রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১, কিংবা এসডিজি, কোনোটাই অর্জন সম্ভব নয় ১০-১৫ লাখ শিশুকে পথে রেখে। আমরা তো সোনার বাংলা অর্জনের কথা বলি। পথশিশুর বোঝা কাঁধে নিয়ে সোনার বাংলা অর্জন সম্ভব? বিভিন্ন সময়ে শিশুবান্ধব নানা কর্মসূচি ও প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এগুলো আসলে যথেষ্ট নয়।পথশিশু একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়।

পথশিশুদের জন্য প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত নীতিমালা ও প্রকল্প এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। তখনই আশা করতে পারি, একটা নির্দিষ্ট সময় পর পথশিশু নামক কোনো টার্ম বাংলাদেশে থাকবে না। আমাদের উচিৎ পথ শিশুদের জন্য হোমের ব্যবস্থা করা যেখানে এদের মৌলিক অধিকার গুলো আদায় হবে, যেখানে এরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুবিধা পাবে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারবে। এই অনিশ্চিত ভবিষৎ গুলোকে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত