জীববৈচিত্র রক্ষায় নির্দিষ্ট জায়গা সংরক্ষণ করার দাবি পরিবেশবাদীদের, চলছে রমজান মাস তাই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে উখিয়ার ইনানী, পাটুয়ার টেক ও সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকত। সৈকতের ছাতা ও বেঞ্চগুলো পড়ে রয়েছে ফাঁকা। বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা। বিশেষ করে দর্শনীয় পয়েন্টগুলোতে পর্যটকদের আনোগেনা না থাকায় প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
রমজানের একদিন আগেও পর্যটকের ভিড় ছিল সৈকতে। রমজান শুরুর সাথে সাথে পর্যটক না আসায় সৈকতে মনোমুগ্ধকর আলপনা আঁকছে লাল কাঁকড়ার দল। সূর্যের তাপে বালু উত্তপ্ত হয়ে গেলেই দেখা মেলে আট পায়ে ভর করে চলা লাল কাঁকড়ার বিচরণ। এ যেন সৈকতের অলংকার। সৈকতে নামতেই মনে হয় অলংকার দিয়ে সাজানো হয়েছে সৈকত।
উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে নামলেই দেখা যায় এই দৃশ্য। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াড়ির অসংখ্য গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে লাখ লাখ কাঁকড়া। তারপর বেলা পড়তেই এসব লাল কাঁকড়ার মহড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য মনোমুগ্ধ করতো পর্যটকদের, যদিও সৈকতে নেই কোন পর্যটক। লাল কাঁকড়ার মিলনমেলায় জায়গাটি মুখরিত থাকে প্রতিটি মুহূর্ত।
সোনারপাড়া সৈকতটি এখন পর্যটকদের জন্য নয় লাল কাঁকড়ার দখলে রয়েছে। পাশাপাশি সাগরলতা, শামুক-ঝিনুক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। পর্যটকদের আনাগোনা ও শব্দ দূষণের কারনে প্রকৃতির সৌন্দর্য হারাতে বসেছিল সোনারপাড়ার এই সৈকত। রমজান মাসে হঠাৎ পর্যটক শূণ্য হওয়ায় সৈকতে ছেয়ে গেছে লাল কাঁকড়ার মেলা। দেখা দিচ্ছে ছোট ছোট কচ্ছপ। সৈকতের পাশে ঝাউগাছের বাগান পেয়েছে আলাদা সৌন্দর্যের মাত্রা।
লাল কাঁকড়া যতক্ষণ আছে বুঝতে হবে সৈকত নিরাপদ কারন নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রকৃতির এই অদ্ভুদ প্রাণীটি বুঝে যায় ভাঙনের অগ্রিম খবর। সমুদ্র আর কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মধ্যবর্তী বেলাভূমি বা সৈকতের বাসিন্দা এই লাল কাঁকড়া
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক জেলেরা সৈকতে মাছ ধরার পর সোনারপাড়ার এই জায়গায় বিশ্রাম নেই। লাল কাঁকড়ার মহড়া তাদের কাছে খুবি পরিচিত একটি দৃশ্য। পর্যটকশূণ্য হলেই বা প্রতিবছর রমজানে এই সৈকতে লাল কাঁকড়ার মিলনমেলার মত হয়।
এদিকে সৈকতে হঠাৎ তুষার বড়ুয়া নামক এক যুবকের সাথে দেখা হয় পড়ন্ত বিকেলে। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানান, আমি দূর থেকে আসা পর্যটক না, আমি উখিয়ারই সন্তান। আমি প্রায় সৈকতে পড়ন্ত বিকেল বেলা উপভোগ করতে আসি। কিন্তু আগে কখনো এতবড় লাল কাঁকড়ার মহড়া আমি দেখিনি। চলছে রমজান মাস, নেই কোন পর্যটক। এরই মাঝে মনে হচ্ছে তারা সৈকতের স্বাধীনতা পেয়েছে। সৈকতে নেমে কাঁকড়ার এই মহড়া দেখে মনে হলো সৈকত অলংকার দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে আমার ভাবনা, সৈকতের অলংকার হিসেবে লাল কাঁকড়ার দল যেন বিচরণ করতে পারে সেজন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা সংরক্ষণ করা খুব প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, সবার যেমন বিরতির প্রয়োজন রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রাণ প্রকৃতি ফিরে ফেতে মাঝেমধ্যে একটা বিরতির প্রয়োজন। কারণ মানুষের জন্য যেমন রোজার দরকার তেমনি কক্সবাজার সৈকতেও একটা বিরতি হলো রোজার মাস। তাই রোজা একমাস কক্সবাজারে পর্যটক শূন্য হওয়ায় প্রকৃতি তার নিজস্ব রুপে ফিরে যেতে কিছুটা সময় ও সুযোগ পেয়েছে।
সমুদ্র সৈকতের নির্দিষ্ট একটা জায়গা সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়ে করিম উল্লাহ কলিম আরো বলেন, আমরা সবসময় দাবি জানিয়ে এসেছি সমুদ্র সৈকতের নির্দিষ্ট একটা জায়গা সংরক্ষণ করা হোক। যাতে করে সেখানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপসহ বিভিন্ন ভাবে ঐ জায়গা ব্যবহার করতে পারে। ফিরে আসতে পারে সৈকতে প্রাণ প্রকৃতি।