রমজান শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ চলে গেলো । তাতেই জমে উঠেছে রাজধানীর শপিংমল ও বিপনীবিতানগুলো। চলছে ঈদের কেনাকাটার হিরিক।গতকাল রাজধানীর মার্কেটগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। মার্কেটের মধ্যে ও আশাপাশের রাস্তাগুলোতে হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। রোজার অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবারই ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করছেন -এমনটাই বলছেন দোকানিরা।
গত ২ বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকায় প্রতিবছরের ন্যায় আশানুরূপ বিক্রি করতে পারেনি দোকানিরা। এ বছরে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় বিধি নিষেধ। ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকায় এবং বিক্রি ভালো হওয়ায় দোকানিরাও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। এছাড়াও মাস শেষে চাকুরিজীবিদের বেতন হয়ে যাওয়ায়ও কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকেই প্রচণ্ড গরম আর রোদ উপেক্ষা করে মার্কেটে আসছেন ক্রেতারা। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দুপুরের পর থেকে প্রায় প্রতিটি মার্কেট ও বিপণি বিতান এলাকায় ক্রেতা বাড়তে থাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। তবে, এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রিতার মুখে মাস্ক নেই; সামাজিক দূরত্ব মানার ন্যূন্যতম প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়নি। দু একজন মাস্ক পড়লেও অনেকের মাস্কই সঠিকভাবে পরা ছিল না। ক্রেতাদের এতো বেশি সমাগমের কারণে মার্কেটগুলোর সামনের রাস্তাতে দেখা যায় দীর্ঘ যানজট। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়েও বেগ পেতে হয় পথচারীদের।
শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউসিয়া, নূর ম্যানশন, চন্দ্রিমা মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং সেন্টার, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টার এবং নিউ এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি দোকান ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। শপিংয়ে আসা এক ক্রেতা বলেন, ঈদ কয়েক সপ্তাহ পরে হলেও শুক্রবার ছাড়া ছুটি পাই না, আর শেষের দিকে শপিংমলে ভিড় বেশি হবে, তাই আগে কেনাকাটা করে নিলাম। আর বেতনও পেয়ে গেছি তাই দেরি না করেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করলাম।
বিভিন্ন শপিংমলে বিক্রেতারা বাহারি রঙের সব পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন। কেউ পোশাক শরীরে ট্রায়াল দিচ্ছেন। কেউবা বাচ্চাদের পোশাক কেনায় ব্যস্ত। কেউবা শাড়ি, কসমেটিকস, গহনা, জুতার দোকানে ভিড় জমিয়েছেন। ছেলেদের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। তবে থেমে নেই, সবাই ছুটছেন পছন্দের পোশাকের সন্ধানে। ভিড়ের কারণে ক্রেতার সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। এর মধ্যেই পছন্দের কাপড় কিনছেন ক্রেতারা। ছেলেরা বেশি কিনছেন শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। আর তরুণী ও নারীরা কিনছেন শাড়ি, থ্রি-পিস ও ফ্রক। এছাড়া জুতার দোকানেও বিক্রি বেড়েছে অনেক। মেয়েদের জন্য এই ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল ছোট বড় সকল মার্কেটে সারারা ড্রেস সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকেই ছোট, বড় উভয় সাইজের সারারা ড্রেস কিনছেন। সারারা ড্রেস মূলত ভারত ও পাকিস্তানের একটি জিনপ্রিয় পোশাক। ইতোমধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সকল দোকানদার কাস্টমারদের চাহিদার কথা ভেবে এবারের ঈদের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি সকল উন্নত ব্রান্ডের সারারা ড্রেস বিক্রি করতেছে।এছাড়াও পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান ড্রেসের চলন ভালোই চলছে।
এদিকে বড় বড় অভিজাত বিপণী বিতানের পাশাপাশি ঈদের ছোঁয়া লেগেছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদামে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্তও চলছে কেনাবেচা। ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে টেবিল বসিয়ে পণ্যের পসরা নিয়ে বসা এই শহরের পুরনো চিত্র। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে তিন চাকার ভ্যানগাড়ি। এখন ফুটপাতের পাশে ভ্যানগাড়িতেও ঈদের বাজারের কেনাকাটা চলছে পুরোদমে। সকলের ঈদ আয়োজন সুন্দর ও স্বার্থক হউক, এই প্রত্যাশায়।