মেহেরপুরে ভুয়া আদম দালালের খপ্পরে পরে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অর্ধশত পরিবার। কেউ জাল ভিসায় বিদেশে যেয়ে কাজ না পেয়ে দিনেরপর দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । কেউ বিদেশে যাবার জন্য টাকা দিয়ে দিনের পর দিন দালালের পেছনে ঘুরে নিঃস্ব হয়েছেন ।
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের নওদা পাড়ার মিলন হোসেন, তারানগর গ্রামের বদর উদ্দিন, সদর উপজেলার বেলেগাড়ি গ্রামের রাজু, জিন্নাত, সজিব, হান্নান, শরিফুলসহ পাশ^বর্তি আরও কয়েকটি গ্রামের ৫০ জন যুবক ভুয়া আদম দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে।বেলেগাড়ি গ্রামের জিন্নাত, সজিব আলী, আব্দুল হান্নান সহ বেশ কয়েকজন বলেন বুড়িপোতা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলী দালালের কাছে টাকা দিয়ে এখনো পিছু পিছু ঘুরে আমরা নিঃস্ব প্রায়।
যাদবপুর গ্রামের সৌদি ফেরত সর্বশান্ত রাসেল বলেন, বারাদি গ্রামের আদম দালাল বিল্লাস হোসেনের মাধ্যমে সৌদি আরব যাই। যে কোম্পানীতে কাজ দেবে বলে নিয়ে গিয়েছিলো সেখানে কাজ না দিয়ে তিন মাস পর এক পাকিস্তানি দালালের কাছে আমাদের বিক্রি করে দেই। সেই দালল বেতন দিত না, খেতে দিত একবেলা। রমজান মাসে বিকালে ২ ঘন্টার জন্য বের হতে দিত। আমরা রাস্তার পাশে মিসকিনদের জন্য রাখা খাবার নিয়ে এসে খেতাম। রোজার পর আবারও সেই না খেয়ে থাকা। একটি গোডাউন ঘরে একসাথে ৪০০ জন ছিলাম। এর চেয়ে জেলখানা ভালো। সেখানে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গলাই ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে রোকন নামের একজন । ৭ মাস পর সৌদি প্রবাসি শামীম নামের এক দালালের মাধ্যমে আরও ৩ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরে আসি।
মোনাখালি গ্রামের কাজল বিশ^াস বলেন দারিয়াপুর গ্রামের আদম দালাল সাগর আলীর ও তার মা লালফাতুন খাতুনের মাধ্যমে সৌদি আরব যায়। সৌদি পৌছানোর পর আমরা বুঝতে পারি জাল ভিসায় এসেছি। তিনমাসে কোন কাজ মেলেনি । পরে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে ১৪ দিন জেল খেটে বাড়ি ফিরে আসি।
বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা স্বিকার করে সাগর বলেন, ১৮ জনকে সৌদি পাঠিয়েছি। প্রথম দিকে কোম্পানীর একটু সমস্যা হয়েছিল। বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কাজের কোন লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে সাগর বলেন, আমার এক মামার মাধ্যমে বিদেশ পাঠাই।
এ ব্যাপারে আদম দালাল জাহাঙ্গীর বলেন, আমি সঠিক ভিসা দেওয়ার পরও না যাওয়ায় আদালতে কয়েকজনের নামে মামলা করেছি। তিনি স্বিকার করেছেন বিদেশে লোক পাঠাবার আইনি কোন বৈধ অনুমোদন নেই ।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, ভুয়া দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ না যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। তারপরও কেউ যদি প্রবাসে গিয়ে প্রতারিত হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি এম্বাসিতে যোগাযোগ করলে তাকে সর্বচ্চো সহযোগিতা করা হবে। আবার কেউ যদি দেশে ফিরে আসে সে ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নিতে পারে।