মেহেরপুরে কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বখাটে কিশোর তরুণদের নিয়ে এমন অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। যারা মাদক কারবার, অনলাইন জুয়ার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারীর শ্লীতাহানিসহ নানান অপকর্মে যুক্ত। এসব চক্রের সদস্যদের বড় অংশ কিশোর হলেও নেতাদের বয়স ১৯ থেকে ৩৮ বছর। তাদের বড় ভাই বলে ডাকে চক্রের সদস্যরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব চক্রের নেতাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত অথবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে। গত ২০ বছরে কিশোর অপরাধীদের হাতে অন্ত ১২ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২ বছরে৬ জন খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় তাদের আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের দাবি মেহেরপুরে কিশোর অপরাধ থাকলেও নেইকোন কিশোর গ্যাং।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুরের একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। মেহেরপুর বড় বাজার এলাকায় রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এ এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে মেহেরপুরের কাথুলী সড়কে জাগবাঙ্গালী নামে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ভয়ংকর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
গত ফেব্রুয়ারী থেকে মেহেরপুর ক্রাস এন্ড কনফিশন নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তি কর বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রেয়োগকারী সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে এটা উঠতি বয়সের কিছু কিশোরের কাজ।
১৩ ফেব্রুয়ারী, মেহেরপুর অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত কিশোরা আনলাইন জুয়ার বাংলাদেশের সেকেন্ড ম্যান মোস্তাক নাহিদসহ তার সহযোগি নাহিদ অনিক (২২) ও মেহেদী হাসিব (২৩) কে মেহেরপুর জেলা গোয়েদা আটক করে। এদেরকে অনলাইন জুয়ার চ্যানেল সহ আটক করা হয়।
গত ১ এপ্রিল মুজিবনগর থানা পুলিশ নগদ ৫ লাখ টাকা ও চোরাই মোটর সাইকেল সহ সাম্মু(১৮), রেবিল ২০ ও মারুফ (২১) কে আটবক করে। ওরা মুজিবনগরের একটি এনজিওর ম্যানেজারের বাড়ি থেকে নগদ ৪৫ লাখ টাকা ও একটি মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ৈ যায়।
চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক সংশ্লিস্টতা একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কিশোর অপরাধীদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান জীবনযাপন করে। এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে তারা জড়িত। বিশেষ করে মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে তারা জড়িত।
মেহেরপুর পুলিশ প্রশাসন জানায় যখন যেখানে কিশোর অপরাধিদের তথ্য পাওয়া গেলে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নানা কারণে কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। প্রথমে তুচ্ছ এবং পরে বড় অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছে। গডফাদাররা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে।
মেহেরপুর ছইউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফররুখ আহমেদ বলেন, কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতারাও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। তিনি আরো বলেন আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।
মেহেরপুর ডিবির ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন এখানে কিশোর গ্যাং নেই। তবে কিছু কিশোর অপরাধী আছে। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ চলছে।