ভুল আল্ট্রাসনো রিপোর্টের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে যশোর ইবনেসিনা হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে স্বজনেরা হট্টগোল করেছে। এসময় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীকে লাঞ্চিত করা হয়। মঙ্গলবার এ ঘটনার পর সেখানে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুর বাংলাদেশ বডার গার্ড পাবলিক স্কুল এলাকার বাসিন্দা হাসান ইমাম জানান, তার স্ত্রী ফৌজিয়া হায়াত তোবা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে ইবনেসিনা হাসপাতালের গাইনী বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আয়েশা আক্তারের অধিনে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসনোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়মিতভাবে করানো হয়। তার স্ত্রীর মোট তিনবার আল্ট্রাসনো করানো হয়। সর্বশেষ আল্ট্রাসনো করার তারিখ ছিলো ১৬ মে। এদিন বাচ্চার বয়স দেখানো হয়েছিলো ৩০ সপ্তাহ অর্থাৎ ৭ মাস। আর ওজন ছিলো ১ কেজি ৫শ’ গ্রাম। তিনটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় গর্ভে সন্তান সুস্থ আছে। আল্ট্রাসনো করেছিলেন ডা. ওয়ারা বেগম।
হাসান ইমাম আরও জানান, শনিবার সকালে স্ত্রী তোবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে যশোর আদ-দ্বীন হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক খুলনা আদ-দ্বীনে রেফার্ড করেন। এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করে। এরপর মা-মেয়ে দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন রোববার তার নবজাতক সন্তান মারা যায়। তার স্ত্রী তোবার অবস্থা সংকটাপন্ন। ইবনেসিনা হাসপাতাল ভুল আল্ট্রাসনো রিপোর্টের কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে খুলনার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে।
কারণ হিসেবে হাসান ইমাম জানান, খুলনার হাসপাতাল থেকে আল্ট্রাসনো রিপোর্টে বাচ্চার ঠোঁট কাটাসহ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। তাহলে ইবনেসিনা হাসপাতালের চিকিৎসক আল্ট্রাসনো রিপোর্টে কিভাবে সুস্থ বাচ্চা পেলো। হাসান ইমামের দাবি ভুল রিপোর্টের কারণে তার নবজাতক বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাটি স্বজনদের মাঝে জানাজানি হলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ইবনেসিনা হাসপাতালে গিয়ে ভুলের কৈয়িফত চেয়ে হট্টগোল করেন।
তবে ইবনেসিনা হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে প্রবেশের সময় তারা কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছে। তাদের কর্মকান্ডে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। ইবনেসিনা
হাসপাতালের ম্যানেজার মোজাহিদুল ইসলাম জানান, ঠোঁট কাটার জন্য কারো মৃত্যু হয়না। এছাড়া ১ মাস আগে যখন আল্ট্রাসনো যখন করা হয়েছিলো তখন বাচ্চা সুস্থ ছিলো। তিনি জানান, সঠিক সময়ে প্রসব না হওয়া ও অপরিপক্ক হওয়ার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু স্বজনেরা ভুল আল্ট্রাসনো রিপোর্টের বানোয়াট অভিযোগ তুলে হাসপাতালে হট্টগোল করেছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, হট্টগোলের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মৃত নবজাতকের স্বজনদের নিয়ে আলোচনায় বসা হয়। ওই নবজাতকের পিতাকে মামলা করা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।