যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা জয় শিশু সাইয়ানকে। তার শরীরে তখন জ্বর ছিলো ১০৪ ডিগ্রি। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি নিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় শিশু ওয়ার্ডে।
ওয়ার্ডে নেয়ার পর সেবিকাদের পরামর্শে রোগীর নানী হালিমা বেগম সহকারী রেজিস্ট্রারের কক্ষে যান। তখন ওই কক্ষে বসে ছিলেন ইন্টার্ন রবিউল ইসলাম। শিশুর নানী ডাক্তারকে ‘তুমি’ করে সম্মোধন করে নাতির চিকিৎসার অনুরোধ করেন। রোগীর খোঁজ না নিয়ে ক্ষেপে ওঠেন ইন্টার্ন ডাক্তার রবিউল। দরজায় নক করে না ঢোকা, ‘স্যার’ না বলে তুমি বলায় রীতিমত উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তিনি। ওই মহিলাকে ‘অসভ্য’ বলে গালি দেন। ডাক্তারের উত্তেজিত আচরণে কক্ষে ঢোকেন শিশুর পিতা আবু বক্কর। তিনি শাশুড়ির সাথে অসৌজন্য আচরণের প্রতিবাদ করেন। বেঁধে যায় হট্টগোল। মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনার জের ধরে শিশু রোগীর পিতা আবু বক্কারকে যেতে হয়েছে হাজতে। এই ঘটনায় সচেতন মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।
শিশু সাইয়ানের নানি হালিমা বেগম জানান, ওয়ার্ডে নিয়ে সেবা দেওয়ার জন্য সেবিকাকে বললে তিনি ডাক্তারের চেম্বারে পাঠিয়ে দেন। দরজা নক না করে চিকিৎসকের চেম্বারে প্রবেশ করেন। তখন রুমে বসে অন্যান্য শিশু রোগীদের টিকিটে ব্যবস্থাপত্র লিখছিলেন ডাক্তার। তিনি (হালিমা বেগম) চিকিৎসককে তুমি বলে সম্মোধন করে দ্রুত সেবা প্রদানের অনুরোধ জানান। কিন্তু চিকিৎসক রোগীকে সেবা না দিয়ে ‘স্যার’ বলে না ডাকার কারণে গালি দেন। এ সময় তার জামাই আবু বক্কর চিকিৎসককে ক্ষমা চেতে বলেন। তখন কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ এক হয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানালে তিনি রোগীর স্বজন ও ডাক্তারদের নিয়ে আরএমও রুমে শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ শিশুর বাবাকে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি অপরাধ না করার কারণে ক্ষমা চাননি। ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীর স্বজনদের অনুরোধে সেবিকারা শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা প্রদান করেন। পরে শিশুর বাবাকে আসামি করে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী কোতোয়ালি থানায় মামলা দিয়ে শিশুর বাবাকে জেল হাজতে পাঠানএ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ কেনো বক্তব্য না দিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী বলেন, ‘শিশু সাইয়ানকে প্রোপারলি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সৃষ্ট ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মীমাংসার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইন্টার্নরা শিশুর পিতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে কর্ম বিরতি পালনের হুমকি প্রদান করে। ফলে হাসপাতাল পরিচালনার স্বার্থে শিশুটির বাবার নামে মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।