জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের বায়ুর মান ঠিক করতেও এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এতে বায়ুতে থাকা ক্ষতিকর ভারী ধাতু আর শ্বাসের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করতে পারবে না।
শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বারসিক ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের সহযোগী আয়োজক হিসেবে ছিল পরিবেশ উদ্যোগ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট ও সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, “জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশের বায়ুমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী হবে।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনেরন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, “বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে- এখন শ্বাসের মাধ্যমে ভারী ধাতু রক্তে মিশে যাচ্ছে।”
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডমিনিক সেন্টু গমেজ বলেন, “নির্মল বায়ুতে বেঁচে থাকা মানুষের অধিকার, যা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে আমাদের দেশে বিশেষ করে বড় বড় শহরাঞ্চল বা মেগা সিটিগুলোতে বিশুদ্ধ বা নির্মল বায়ুর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বায়ু দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবার জন্য বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার জন্য জলাভূমি পুনঃরুদ্ধার, নগর বনায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, “বিদ্যুতবিহীন থাকতে যেমন কেউ চায় না, তেমনি শ্বাসটাও নিতে চায় নির্মল বাতাসে। আর এই দুটোই একসঙ্গে সম্ভব নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই।”
সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্সের সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, দেশের সংবিধানে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উচিত নির্মাণকাজের দূষণ রোধ করা, যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।”
ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, “রাষ্ট্রের নীতি ও পরিকল্পনায় বায়ুদূষণ কমানোর অঙ্গীকার থাকলেও বর্তমানে বায়ুমানের অবনতি ঘটছে।”
বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, “জীবাশ্ম জ্বালানি শুধু বায়ুদূষণই করে না, এটি জলজ পরিবেশ দূষণের জন্যও দায়ী। উপকূলীয় অঞ্চলে টাইডাল ও উইন্ড এনার্জির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া।”
সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বায়ুতে নির্গত ক্ষতিকারক দূষকের পরিমাণ কমাতে পারি। এছাড়া মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব কমাতে পারি।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিবেশ উদ্যোগের গবেষণা সমন্বয়ক নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।