যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন শাহারুল ইসলাম ফারদিন লাঞ্চিত হয়েছেন ।
রোবরার দুপুরে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ নিজ অফিস কক্ষে তাকে লাঞ্চিতের পর পুলিশে দেয়া হয় বলে অভিযোগ। এসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) যশোর প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব যশোরের সহ সভাপতি ওহাবুজ্জামান ঝন্টু ও একাত্তর টেলিভিশনের যশোর প্রতিনিধি এস এম ফরহাদের সাথেও মারমুখি আচরণ করেন তিনি। তারা ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, অনুমতি ছাড়াই র বক্তব্য ভিডিও করায় তিনি উচ্চস্বরে ওই ক্যামেরা পারসনকে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
৭১ টিভির যশোর প্রতিনিধি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎষাধীন মোশারফ (৫১) নামে এক রোগী মারা যান। তিনি মণিরামপুর উপজেলার বড় চেতলা গ্রামের রহমান বিশ্বাসের ছেলে।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসা অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। এই সংক্রান্ত তথ্য জানতে তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে মুঠোফোনে জানতে চান। তত্ত্বাবধায়ক তাকে সরাসরি কথা বলার জন্য অফিসে যেতে বলেন।
এসময় তিনি (এস এম ফরহাদ) তার ক্যামেরা পারসন শাহারুল ইসলাম ফারদিন ও বিটিভির যশোর প্রতিনিধি ওহাবুজ্জামান ঝন্টু তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে যান। আমাদের দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তত্ত্বাবধায়ক। কোন কথা বলবেন না বলে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তার এমন আচরণের দৃশ্য ভিডিও করার জন্য শাহারুল ক্যামেরা চালু করলে তত্ত্বাবধায়ক চেয়ার থেকে উঠে এসে তাকে ধাক্কা দেন। এস এম ফরহাদ আরও জানান, এসময় তত্ত্বাবধায়ককে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তাদের দুই জনের (এস (এম ফরহাদ ও ওহাবুজ্জামান ঝন্টু) সাথে মারমুখী আচরণ করেন তত্ত্বাবধায়ক।
শাহারুল ইসলাম ফারদিন জানান, তাকে দেখে তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ জ্বলে ওঠেন। হামলার জন্য তেড়ে আসলে তিনি ক্যামেরা অন করেন। তত্ত্বাবধায়ক তাকে লাঞ্চিত করেই ক্ষ্যান্ত হননি। বরং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সভায় বসেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, তার জানা মতে শাহারুল ইসলাম ফারদিন দৈনিক কল্যান পত্রিকার সাংবাদিক। একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিকের সাথে কথা বলবেন এই জন্য শাহরুলকে অফিস কক্ষ থেকে বাইরে যেতে বলা হয়। তারপরও তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে অনুমতি না নিয়ে তার বক্তব্য ভিডিও করছিলেন শাহারুল। যে কারণে তিনি উচ্চস্বরে তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে পেশী শক্তি দেখানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ডাকা হয়। ক্যামেরা ভাংচুরের চেষ্টার অভিযোগ মিথ্যা।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের সাথে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মারমুখি আচরণে সাংবাদিক সমাজ ক্ষুব্ধ। এই ঘটনায় তার দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি করছি। তিনি আরও বলেন, এতো বড় একটি হাসপাতাল পরিচালনা করতে হলে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। খারাপ ব্যবহার করে হাসপাতাল চালানো যাবে না।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, সাংবাদিকদের যতদূর সম্ভব তথ্য দেওয়া উচিত হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের। কিন্তু তিনি তা করেননি। সেইসঙ্গে সংবাদকর্মীরা সরকারি অফিসে গিয়ে শিষ্টাচার বজায় রাখেননি বলে জেনেছি। সরকারি অফিসে সংবাদকর্মীদের শিষ্টাচার বজায় রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটাই ভালো। এটা রীতিমতো অনাকাঙ্খিত।