যশোর-মাগুরা মহাসড়কের সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া এলাকা থেকে এসএম ময়মুর রহমান (৬৫) নামে স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষকের গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। তিনি গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে ঝোপ ঝাড়ের ভিতর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। নিহত ময়মুর রহমান মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের মৃত কামাল উদ্দিন সরদারের ছেলে। তার পকেটে পাওনা টাকার তথ্য সংক্রান্ত একটি চিরকুট ছিলো। স্বজনদের দাবি, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তিনি খুন হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন লাকি মৃতদেহটি তার স্বামী এসএম ময়মুর রহমানের বলে শনাক্ত করেন। গত ২৯ দিন আগে পাওনা টাকা আনতে গিয়ে তার স্বামী খুন হয়েছে বলে নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে মৃতদেহ সড়কের পাশে ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে ফেলে রেখে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিহতের স্ত্রী শিরিনা খাতুন লাকি জানান, তার স্বামী এসএম ময়মুর রহমান সদর উপজেলার মুনসেফপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আনুমানিক ৭ বছর আগে তিনি চাকুরি থেকে অবসরে আসেন। এরপর তারা স্ব পরিবারের যশোর শহরতলী বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে মিজানুর রহমানের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
লাকি আরও জানান, এসএম ময়মুর রহমান পূর্ব পরিচিত বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজার এলাকার মঙ্গল বিশ্বাসের ছেলে হাসান আলীর কাছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পেতেন। তাকে ভালো চাকরি দেয়ার নাম করে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর টাকাগুলো নিয়ে যান। কিন্তু পরে চাকরি দেয়ার নামে তালবাহানা করতে থাকে। পরে এই টাকা নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোদ্বন্দ্ব শুরু হয়।
লাকি আরও জানান,গত ১১ সেপ্টেম্বর হাসানের বাড়িতে পাওনা টাকা চাওয়ার জন্য যান তার স্বামী ময়মুর রহমান। এদিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন হাসান ও পারভেজ নামে দুই জন তার স্বামীকে হত্যা করে লাশ গুম করে রেখেছে। কিন্তু পুলিশ সেটা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করেননি। বরং তাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে তিনি নাকি তার স্বামীকে লুকিয়ে রেখেছেন। তাহলে তার স্বামীকে হত্যা করলো কে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
স্বামীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন শিরিনা খাতুন লাকি। নিহতের পকেট থেকে পাওনা টাকা সংক্রান্ত একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেটি পুলিশের কাছে জমা রয়েছে।
নিহতের বাড়িওয়ালা মিজানুর রহমান জানান, থানায় অভিযোগ করার পর ডিবি পুলিশ হাসানের দুই ছেলে টিটো ও মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনেন। কিছু সময় পর অজ্ঞাত কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম জানান, তার ভাইয়ের মরদেহের উদ্ধারের খবরে হাসপাতালে এসেছি। তিনি হত্যা করতে হবে এমন কোন অন্যায় তিনি করেননি। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তিনি খুনের শিকার হয়েছেন বলে তাদের ধারণা। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল জুয়েল ইমরান জানান, সাবেক প্রধান শিক্ষকের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হত্যার কারণ তদন্ত করা হচ্ছে।