জার্মান নাগরিকত্ব পেতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
জার্মান নাগরিকত্ব পেতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত নিয়ে বিতর্ক
জার্মান পাসপোর্ট/সংগৃহীত

জার্মানির রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্ট বিদেশিদের নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ করেছে। আবেদনকারীকে এখন লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, তিনি “ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিপক্ষে যেকোনো প্রচেষ্টার নিন্দা জানান”।

গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এই নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেছেন। বাকি ১৫টি রাজ্যের প্রতিও একই নিয়ম আরোপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধীনে
জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও এর বাস্তবায়ন ১৬টি রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরায়েল সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগেও। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সারা জার্মানিতেই তখন নিয়মটি কার্যকর হবে।

জিশাং বলেন, “ইসরায়েলের ওপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয়, বরং ‘ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার’ তুলে ধরার প্রচেষ্টা।”

সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি এবং ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে সামনে এনেছে মধ্য-ডানপন্থী খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ। ক্ষমতাসীনসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে। তবে অ্যান্টি সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তিনদলীয় জোট সরকার। সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদম্যান অস্থির পরিস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

তবে জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, “এটি তার রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের বিকাশের জন্য আরও সুযোগ করে দেওয়ার একটি উপায়।”

বিদেশিদের লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ইহুদিসহ জার্মানির অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বড় হুমকি মোকাবিলায় তা কাজে আসবে কি-না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ অপরাধের নিয়মিত পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিদেশিদের চেয়ে অনেক বেশি।

সাক্সনি-আনহাল্টেই ২০১৯ সালে সিনাগগে হামলায় দুইজন নিহত হন। হামলাকারী ছিলেন একজন উগ্র ডানপন্থী জার্মান। ২০২০ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।

প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়। সাক্সনি-আনহাল্টে এরই মধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে। রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা তারও বেশি লাগে। অবশ্য এমন দেরির ঘটনা এখন পুরো জার্মানিতে স্বাভাবিক।

জার্মানির জাতীয় স্বার্থ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হলোকাস্টে জার্মানির তৎকালীন নাৎসি সরকার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। তার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে জার্মানির জাতীয় স্বার্থ বলে ঘোষণা দেন। জিশাং মনে করেন, নাগরিকত্বের শর্তের বিষয়ে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির সেই অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ।

তবে এ বিষয়ে জার্মানির জনগণের মধ্যে এখনও বিভক্তি রয়ে গেছে। নভেম্বরের শেষে আলেন্সবাখ নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার পক্ষে মত দিয়েছেন। হামাসকে ধ্বংসে ইসরায়েলের বর্তমান অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৫% এবং ইসরায়েলের সংযম প্রদর্শনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮% নাগরিক।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জার্মান নাগরিকত্ব পেতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত নিয়ে বিতর্ক

জার্মান নাগরিকত্ব পেতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত নিয়ে বিতর্ক
জার্মান পাসপোর্ট/সংগৃহীত

জার্মানির রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্ট বিদেশিদের নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ করেছে। আবেদনকারীকে এখন লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, তিনি “ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিপক্ষে যেকোনো প্রচেষ্টার নিন্দা জানান”।

গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এই নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেছেন। বাকি ১৫টি রাজ্যের প্রতিও একই নিয়ম আরোপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধীনে
জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও এর বাস্তবায়ন ১৬টি রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরায়েল সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগেও। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সারা জার্মানিতেই তখন নিয়মটি কার্যকর হবে।

জিশাং বলেন, “ইসরায়েলের ওপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয়, বরং ‘ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার’ তুলে ধরার প্রচেষ্টা।”

সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি এবং ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে সামনে এনেছে মধ্য-ডানপন্থী খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ। ক্ষমতাসীনসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে। তবে অ্যান্টি সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তিনদলীয় জোট সরকার। সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদম্যান অস্থির পরিস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

তবে জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, “এটি তার রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের বিকাশের জন্য আরও সুযোগ করে দেওয়ার একটি উপায়।”

বিদেশিদের লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ইহুদিসহ জার্মানির অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বড় হুমকি মোকাবিলায় তা কাজে আসবে কি-না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ অপরাধের নিয়মিত পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিদেশিদের চেয়ে অনেক বেশি।

সাক্সনি-আনহাল্টেই ২০১৯ সালে সিনাগগে হামলায় দুইজন নিহত হন। হামলাকারী ছিলেন একজন উগ্র ডানপন্থী জার্মান। ২০২০ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।

প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়। সাক্সনি-আনহাল্টে এরই মধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে। রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা তারও বেশি লাগে। অবশ্য এমন দেরির ঘটনা এখন পুরো জার্মানিতে স্বাভাবিক।

জার্মানির জাতীয় স্বার্থ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হলোকাস্টে জার্মানির তৎকালীন নাৎসি সরকার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। তার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে জার্মানির জাতীয় স্বার্থ বলে ঘোষণা দেন। জিশাং মনে করেন, নাগরিকত্বের শর্তের বিষয়ে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির সেই অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ।

তবে এ বিষয়ে জার্মানির জনগণের মধ্যে এখনও বিভক্তি রয়ে গেছে। নভেম্বরের শেষে আলেন্সবাখ নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার পক্ষে মত দিয়েছেন। হামাসকে ধ্বংসে ইসরায়েলের বর্তমান অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৫% এবং ইসরায়েলের সংযম প্রদর্শনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৮% নাগরিক।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত