নির্বাচন বর্জন করে ভোট ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। তার ওপর বিভিন্ন আসনে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অনেক এলাকায় দুপক্ষের রেষারেষি সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে পারে এমন শঙ্কাও করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন। এমনিতেই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিদ্যমান সব বাধা অতিক্রম করে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে ভোট গ্রহণের মাত্র ১১ দিন বাকি থাকলেও নানামুখী চাপে আছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিএনপিসহ নিবন্ধিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় এ নির্বাচনে অনেকটা শূন্যতা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ওই দলগুলো এখন ভোট ঠেকানোর কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। তপশিল ঘোষণার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছে তারা। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলনেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত এসব কর্মসূচির তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে পারে তারা। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর বর্জন সত্ত্বেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ভোটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে ন চাওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে চলছে টানটান উত্তেজনা।
এদিকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘদিনের চাপ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনিপেক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে ভোটারদের সন্তোষজনক উপস্থিতি নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ভোট প্রদানের হার অস্বাভাবিক মাত্রায় কম হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনাররা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা। এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামবেন সেনাসদস্যরা। ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এরই মধ্যে বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি, এসআইসহ সারা দেশে পুলিশ ও প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের চাপ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে কমিশনের। সরকারবিরোধীদের বর্জন ও ভোট ঠেকানো ছাড়াও সারা দেশে প্রার্থীদের দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণ করে শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের হার বাড়ানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ।