পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে শতাধিক আসনে ফলাফল গণনার পর কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমর্থকরা এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির ২৬৫ সংসদীয় আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ১০৬টি আসনে ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন করেন এমন স্বতন্ত্র ৪৭ প্রার্থী ভোটে জয়লাভ করেছেন।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ৭০ আসনের ফলাফল ঘোষণা করে। যেখানে ২৪ আসনে ইমরান খান সমর্থকরা জয়লাভ করেন বলে জানা যায়।
নিহত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি ২৪ আসনে জয় পেয়েছে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ১৮টিতে জয়ী হয়েছে।
বাকিগুলো জিতেছে ছোট দলগুলো।
ইমরান খান কারাগারে রয়েছেন। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হয়নি। ইমরানের সমর্থকরা স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভোটে কোনো দল সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে।
এরই মধ্যে ভোটের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়া নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও ইসিপির বিশেষ সচিব জাফর ইকবাল দাবি করেছেন, “এই বিলম্বের কারণ ইন্টারনেট সমস্যা।”
এর আগে, সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বৃহস্পতিবার নির্বাচনের আগে মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ রাখে।
ধারণা করা হয়েছিল, ভোটে সেনা সমর্থিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন দলের সঙ্গে লড়াই হবে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের ৭৬ বছরেও এখনও দেশটিতে আধিপত্য চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী।
এদিকে এমন এক সময়ে পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশটির অর্থনীতি পতনের দোরগোড়ায়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষের তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে একটি নতুন বেলআউট প্রোগ্রাম চাওয়া হচ্ছে।
কোনো দলই স্পষ্ট বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবে না মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্বাস নাসির বলেন, “নির্ধারক ফ্যাক্টর হল শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও এর নিরাপত্তা সংস্থাগুলো কোন দিকে রয়েছে। শুধুমাত্র একটি বিশাল ভোট বিপ্লব তার (ইমরান খান) ভাগ্য বদলে দিতে পারে।”
“তবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এতো গুরুতর যে, কেউ ক্ষমতায় এলে তার জন্য এটি সামাল দেওয়া হবে বিশাল চ্যালেঞ্জের,” যোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ভোটের জন্য সারাদেশে ভোট কেন্দ্রে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করায় ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও, ৫১টি বোমা বিস্ফোরণ, গ্রেনেড হামলা ও জঙ্গিদের গুলিতে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছে। বেশিরভাগই পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে।
তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গহর এজাজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সত্ত্বেও, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।”
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেন, “ওয়াশিংটন মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার জন্য বিশেষ করে ইন্টারনেট ও মুঠোফোন ব্যবহারে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বিগ্ন।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন উভয় ক্ষেত্রেই নির্বাচন-সম্পর্কিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সহিংসতা ও মোবাইল ফোন যোগাযোগ পরিষেবা স্থগিত করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করাকে “বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের ওপর একটি নির্মম আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছেন।