সলঙ্গা গণহত্যা দিবসকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দিতে এবং স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার (২৭ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এ নোটিশ পাঠান।
রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ না নিলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া করা হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।
বিদেশি পণ্য বর্জন ও স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের সলঙ্গা হাটে গণহত্যা সংঘটিত হয়। যুবনেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে সলঙ্গা এলাকায় আন্দোলনরত জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ব্রিটিশ পুলিশ। এতে বহু মানুষ নিহত হন।
আইনি নোটিশদাতা বলেছেন, সলঙ্গা বিদ্রোহের বয়স ১০০ বছর পার হয়েছে। এত বছর পরও দিবসটি জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য ব্যর্থতা ও লজ্জার। তাই একজন সলঙ্গাবাসী এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এ আইনি নোটিশ পাঠানো হলো।
নোটিশে বলা হয়, ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল সলঙ্গা হাটের দিন। এটিই ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় হাট। সেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সেদিন যুবক আব্দুর রশিদের (যিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ নামে পরিচিত) নেতৃত্বে সলঙ্গা হাটে চলতে থাকে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযান। “বিলেতি পণ্য বর্জন কর, এ দেশ থেকে ব্রিটিশ হটাও” শ্লোগানে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচারাভিযান যখন তুঙ্গে, তখন কংগ্রেস অফিস থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সে দিন ব্রিটিশ বেনিয়াদের নৃশংসতার এক রক্তাক্ত অধ্যায় বিরচিত হয় সলঙ্গায়।
নোটিশে আরও বলা হয়, সমগ্র ভারতবাসীর জন্য রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঐতিহাসিক এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয় সেখানে। ৩৯ জন ব্রিটিশ পুলিশের রাইফেলের মূহুর্মুহু গুলিতে রক্তের বন্যা বয়ে যায় সলঙ্গার মাটিতে। পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক এস কে সিনহা এবং পাবনা জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। সে দিনের সন্ধ্যার সলঙ্গার মাটি নিহত ও আহত মানুষ এবং গৃহপালিত পশুর রক্তে ভেসে যায়। নিহতদের লাশ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জে। সেখানে তৈরি হয় বাংলাদেশের প্রথম গণকবর। আজও সে গণকবর সলঙ্গার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এছাড়া হোসেনপুর, বাসুদেবকোলসহ সলঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় নিহতদের কবরস্থ করা হয়। সরকারিভাবে এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দেখানো হয় সাড়ে চার হাজার। কিন্তু বেসরকারি তথ্যমতে এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি বলে জানা যায়।
নোটিশদাতা বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও প্রকাশনায় এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের স্বীকৃতি রয়েছে। ইতিহাসে দিনটিকে সলঙ্গা দিবস হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিবসটি কেবল স্থানীয়ভাবেই পালন করা হয়। জাতীয় দিবস হিসেবে এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি আজও। এমনকি ঘটনাস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সলঙ্গা অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বই-পুস্তকে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলও এ বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু জাতীয় দিবস ঘোষণা বা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি।