রিমন-নাজমুলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
রিমন-নাজমুলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল
ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট আগামী ৯ জুন (রবিবার)। নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে নেতাকর্মীরা। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৭জন প্রার্থী লড়ছেন। সবাই নিয়ম-নীতি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালালেও নিয়ম মানছেন না দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হোসাইন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনামুল হোসাইনের বড় ভাই নাজমুল হোসেন পুলিশের এডিসি। ভাই নাজমুল হোসেন ও পাথরঘাটার সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের আশকারায় নির্বাচনী আচারণ-বিধি মানছেন না এনামুল হোসাইন।

নির্বাচনে অর্থ বিতরণের ঘটনায় ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এনামুল হোসাইনকে (দোয়াত–কলম প্রতীক) গত ২৪ মে (শুক্রবার) ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে (ইসি) তলব করা হয়েছে।

এদিকে গত ৩০ মে রাতে উপজেলার কাকচিড়া এলাকার কাটাখালী বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এনামুল তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মোস্তফা গোলাম কবিরের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলা চলাকালীন সময়ে এনামুলের ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা এসআই বাহাদুরও সেখানে উপস্থিত ছিল। পরে সেখানে সাধারণ লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়েন।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের আহতরা পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও এনামুলের সমর্থকরা হাসপাতালের বিদ্যুৎ এর মেইন সুইচ অফ করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন মোস্তফা গোলাম কবিরের কর্মী-সমর্থকরা।

এ সময় হাসপাতালে আলো না থাকায় এনামুল হোসাইনসহ তার বেশ কয়েকজন কর্মী পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। অন্যদিকে মোস্তফা গোলাম কবিবের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী এনামুলের কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
হাসপাতালে সংঘর্ষের একটি ছোট ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় পাথরঘাটা থানায় উভয় পক্ষের কর্মী সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞতানামা প্রায় তিন শতাধিককে আসামী করা হয়।

এই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী এনামুল তার ভাই এডিসি নাজমুলের ক্ষমতায় গত ১মে (শনিবার) বিকেলে ডিবি দিয়ে মোস্তফা গোলাম কবিরের ২ কর্মীকে গ্রেফতার করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি আল মামুন বলেন, এই ঘটনা যাতে নির্বাচনের ওপর প্রভাব না পরে সে কারণে এই মারামারির সাথে যারা জড়িত তাদের আটকের ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।

এদিকে নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার পূর্বেও এনামুল হোসাইনের বিরুদ্ধে এলাকায় নানান অভিযোগ রয়েছে, বড় ভাই পুলিশের এডিসি হওয়ায় গত কয়েক বছরে এলাকার বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী একাধিক বনভূমি নিয়ন্ত্রণ করেন এনামুল হোসাইন। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা একাধিক বিশাল চর দখল করে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে জেলেদের দিয়ে মাছ শিকার করেন তিনি।

এই অঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, লালদিয়া, জ্ঞানপাড়া ও চরদুয়ানি থেকে শুরু করে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করেন দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী। এর মধ্যে হরিণঘাটা, ধারের খাল, পদ্মা সুইচ, সোনাতলা, রুহিতা, হাঝির খাল, টেংরা, তাফালবাড়িয়া, জ্ঞানপাড়া চরদুয়ানীসহ আশাপাশের এলাকার নদী তীরবর্তী দুই শতাধিক বনাঞ্চলের পয়েন্ট এনামুল হোসাইনের নিয়ন্ত্রনে।

এছাড়া বলেশ্বর ও বিষখালীর মোহনায় গড়ে ওঠা লালদিয়া, বিহঙ্গ দ্বীপ, হরিণঘাটা অন্তত ১২টি বিস্তীর্ন চরাঞ্চল তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। একইসাথে সুন্দরবনের সুপতি, চান্দেশ্বর, কটকা, কাডামারা, ডিমেরচর, কচিখালী, নারকেলবাড়িয়া এলাকায়ও রয়েছে তার আধিপত্য।

২০১০ সালে উপজেলা যুবদলের সদস্য এবং ২০১৩ সালে সেচ্ছাসেবক দলের আইন বিষয়ক সদস্য ছিলেন এনামুল হোসেন। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৬ সালে বাগিয়ে নেন পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর বিএনপির রাজনীতি থেকে উঠে আসা এনামুল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের সহায়তায় ডিসেম্বর মাসে পদ ফিরে পান তিনি। ভাইয়ের প্রভাব আর এমপি রিমনের প্রত্যক্ষ মদদে এলাকায় ‘এনামুল বাহীনি’ নামের একটি বাহীনি গড়ে তুলেছেন তিনি।

পুলিশ অফিসার বড় ভাইয়ের বদৌলতে বরগুনা জেলা পরিষদের পাথরঘাটা অঞ্চলের সদস্যও হয়েছেন তিনি। আর এবার হয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ কারণে শঙ্কিত পাথরঘাটাবাসী।

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকচিড়া ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে তাঁর এবং এনামুলের সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা মিটমাট করে দেয়। তারপরও সন্ধ্যায় এনামুল লোকজন নিয়ে ওই এলাকায় আমার লোকজনকে মারধর করে। সে সময়ে এনামুলের ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা এসআই বাহাদুরও সেখানে উপস্থিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, ওই সংঘর্ষে আহত আমার দুই কর্মী শাহ আলী ও রাকিবকে পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আমার লোকজন তাদের দেখতে যায়। এ সময় এনামুলের সমর্থকেরা হাসপাতালে সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমার অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। আমার পক্ষে গণজোয়ার দেখে এনামুল সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেনের সহযোগিতায় নির্বাচন বানচাল করার জন্য এসব করছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হোসাইন বলেন, নির্বাচন কমিশন যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে ডেকেছে, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া এই নির্বাচনের শুরু থেকে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির ও তার কর্মী সমর্থকরা আমাকে নানান ভাবে হয়রানি করে আসছে। গত ৩০ মে আমার কর্মীদের উপর তারা হামলা চালায়। পরে আমি সেখানে গেলে আমার মাথায় কোপ দেয়। এতে আমার মাথা ফেটে যায় এবং পিটিয়ে আমার হাতের কব্জি ভেঙে দেয়। পরে সেখান থেকে পুলিশ উদ্ধার করে আমাকে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। এতে আমার নেতাকর্মী আহত হয়।

তিনি আরও বলেন, সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও আমার আপন বড় ভাই এডিসি হলেও তাদের কোন প্রভাব আমার নির্বাচনের উপর নেই। এছাড়া সাবেক এমপি সে এলাকায়ও থাকেন না।

প্রসঙ্গত, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৯ মে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে তা স্থগিত হয়। পরে নির্বাচন কমিশন আগামী ৯ জুন নতুন ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রিমন-নাজমুলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল

রিমন-নাজমুলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল
ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট আগামী ৯ জুন (রবিবার)। নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে নেতাকর্মীরা। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৭জন প্রার্থী লড়ছেন। সবাই নিয়ম-নীতি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালালেও নিয়ম মানছেন না দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হোসাইন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনামুল হোসাইনের বড় ভাই নাজমুল হোসেন পুলিশের এডিসি। ভাই নাজমুল হোসেন ও পাথরঘাটার সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের আশকারায় নির্বাচনী আচারণ-বিধি মানছেন না এনামুল হোসাইন।

নির্বাচনে অর্থ বিতরণের ঘটনায় ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এনামুল হোসাইনকে (দোয়াত–কলম প্রতীক) গত ২৪ মে (শুক্রবার) ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে (ইসি) তলব করা হয়েছে।

এদিকে গত ৩০ মে রাতে উপজেলার কাকচিড়া এলাকার কাটাখালী বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এনামুল তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মোস্তফা গোলাম কবিরের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলা চলাকালীন সময়ে এনামুলের ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা এসআই বাহাদুরও সেখানে উপস্থিত ছিল। পরে সেখানে সাধারণ লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়েন।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের আহতরা পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও এনামুলের সমর্থকরা হাসপাতালের বিদ্যুৎ এর মেইন সুইচ অফ করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন মোস্তফা গোলাম কবিরের কর্মী-সমর্থকরা।

এ সময় হাসপাতালে আলো না থাকায় এনামুল হোসাইনসহ তার বেশ কয়েকজন কর্মী পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। অন্যদিকে মোস্তফা গোলাম কবিবের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী এনামুলের কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
হাসপাতালে সংঘর্ষের একটি ছোট ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় পাথরঘাটা থানায় উভয় পক্ষের কর্মী সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞতানামা প্রায় তিন শতাধিককে আসামী করা হয়।

এই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী এনামুল তার ভাই এডিসি নাজমুলের ক্ষমতায় গত ১মে (শনিবার) বিকেলে ডিবি দিয়ে মোস্তফা গোলাম কবিরের ২ কর্মীকে গ্রেফতার করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি আল মামুন বলেন, এই ঘটনা যাতে নির্বাচনের ওপর প্রভাব না পরে সে কারণে এই মারামারির সাথে যারা জড়িত তাদের আটকের ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।

এদিকে নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার পূর্বেও এনামুল হোসাইনের বিরুদ্ধে এলাকায় নানান অভিযোগ রয়েছে, বড় ভাই পুলিশের এডিসি হওয়ায় গত কয়েক বছরে এলাকার বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী একাধিক বনভূমি নিয়ন্ত্রণ করেন এনামুল হোসাইন। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা একাধিক বিশাল চর দখল করে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে জেলেদের দিয়ে মাছ শিকার করেন তিনি।

এই অঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, লালদিয়া, জ্ঞানপাড়া ও চরদুয়ানি থেকে শুরু করে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করেন দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী। এর মধ্যে হরিণঘাটা, ধারের খাল, পদ্মা সুইচ, সোনাতলা, রুহিতা, হাঝির খাল, টেংরা, তাফালবাড়িয়া, জ্ঞানপাড়া চরদুয়ানীসহ আশাপাশের এলাকার নদী তীরবর্তী দুই শতাধিক বনাঞ্চলের পয়েন্ট এনামুল হোসাইনের নিয়ন্ত্রনে।

এছাড়া বলেশ্বর ও বিষখালীর মোহনায় গড়ে ওঠা লালদিয়া, বিহঙ্গ দ্বীপ, হরিণঘাটা অন্তত ১২টি বিস্তীর্ন চরাঞ্চল তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। একইসাথে সুন্দরবনের সুপতি, চান্দেশ্বর, কটকা, কাডামারা, ডিমেরচর, কচিখালী, নারকেলবাড়িয়া এলাকায়ও রয়েছে তার আধিপত্য।

২০১০ সালে উপজেলা যুবদলের সদস্য এবং ২০১৩ সালে সেচ্ছাসেবক দলের আইন বিষয়ক সদস্য ছিলেন এনামুল হোসেন। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৬ সালে বাগিয়ে নেন পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর বিএনপির রাজনীতি থেকে উঠে আসা এনামুল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের সহায়তায় ডিসেম্বর মাসে পদ ফিরে পান তিনি। ভাইয়ের প্রভাব আর এমপি রিমনের প্রত্যক্ষ মদদে এলাকায় ‘এনামুল বাহীনি’ নামের একটি বাহীনি গড়ে তুলেছেন তিনি।

পুলিশ অফিসার বড় ভাইয়ের বদৌলতে বরগুনা জেলা পরিষদের পাথরঘাটা অঞ্চলের সদস্যও হয়েছেন তিনি। আর এবার হয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ কারণে শঙ্কিত পাথরঘাটাবাসী।

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকচিড়া ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে তাঁর এবং এনামুলের সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা মিটমাট করে দেয়। তারপরও সন্ধ্যায় এনামুল লোকজন নিয়ে ওই এলাকায় আমার লোকজনকে মারধর করে। সে সময়ে এনামুলের ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেন ও তার মামা এসআই বাহাদুরও সেখানে উপস্থিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, ওই সংঘর্ষে আহত আমার দুই কর্মী শাহ আলী ও রাকিবকে পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আমার লোকজন তাদের দেখতে যায়। এ সময় এনামুলের সমর্থকেরা হাসপাতালে সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমার অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। আমার পক্ষে গণজোয়ার দেখে এনামুল সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার ভাই পুলিশের এডিসি নাজমুল হোসেনের সহযোগিতায় নির্বাচন বানচাল করার জন্য এসব করছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হোসাইন বলেন, নির্বাচন কমিশন যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে ডেকেছে, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া এই নির্বাচনের শুরু থেকে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা গোলাম কবির ও তার কর্মী সমর্থকরা আমাকে নানান ভাবে হয়রানি করে আসছে। গত ৩০ মে আমার কর্মীদের উপর তারা হামলা চালায়। পরে আমি সেখানে গেলে আমার মাথায় কোপ দেয়। এতে আমার মাথা ফেটে যায় এবং পিটিয়ে আমার হাতের কব্জি ভেঙে দেয়। পরে সেখান থেকে পুলিশ উদ্ধার করে আমাকে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। এতে আমার নেতাকর্মী আহত হয়।

তিনি আরও বলেন, সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও আমার আপন বড় ভাই এডিসি হলেও তাদের কোন প্রভাব আমার নির্বাচনের উপর নেই। এছাড়া সাবেক এমপি সে এলাকায়ও থাকেন না।

প্রসঙ্গত, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৯ মে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে তা স্থগিত হয়। পরে নির্বাচন কমিশন আগামী ৯ জুন নতুন ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত