কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতায় সাভারে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালসহ সারা দেশে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান।
রোববার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
আব্দুর রহমান বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় সাভারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রংপুরে কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সারা দেশে সবমিলিয়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, সাভারের সহিংস হামলা লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে চারজনের কাছ থেকে লুট করা মালামাল উদ্ধার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এমন নৃশংস হামলার ঘটনা দুঃখজনক, মর্মাহত মন্তব্য করে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী তিনিও আন্তরিকভাবে এটি চান। এ ক্ষতি তো পূরণ করবার মতো নয়। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আর যাই থাকুক না কেন, তারা (হামলাকারী) ছাত্র নয়। এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, সাভারে এমনভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে, চোখে না দেখলে এগুলো বিশ্বাস করা যায় না। দেখে মনে হয়েছে, এসব স্থাপনার সাথেই যেন যুদ্ধ করা হয়েছে। সাভার প্রাণিসম্পদ অফিসে ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের টিভি, ফ্রিজ, এসিসহ সব আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার পরদিন দুজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে দেখতে গেলে তাদেরও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
দুষ্কৃতিকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় আর যাই হোক, তারা কোনও স্কুল-কলেজের ছাত্র না। স্কুলকলেজের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে তাদের কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। তবে যারা বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা, ডিজাস্টার ভবন, সেতুভবনে আগুন দিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে, তাদের মতই কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
সহিংসতায় প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে কোন প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি অপূরণীয় এবং দুঃখজনক। এজন্য মর্মাহত। আমরা প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই। আমাদের সরকার ও সরকারপ্রধান আন্তরিকভাবে এটি চান।
সাভারে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক ভাঙচুর করায় সেবা প্রদান করা ব্যাহত হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি চালু করা সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাহত হবে। তবে এই মুহূর্তে এটি চালু করার মত অবস্থায় নেই।
সহিংসতায় খামারিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই কমিটি এটি নির্ণয় করে প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রাণিজ পণ্য যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, পরিবহন ও বিপণনের জন্য খামারিদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। খামারিদের ক্ষতির বিষয়টি মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে দেখবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।